আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে দুই সন্তানের আবেগঘন স্ট্যাটাস

বাবুইকে ছাড়া চলে গেল দুই বছর

প্রয়াত সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ও তাঁর দুই সন্তানের স্ট্যাটাস
প্রয়াত সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ও তাঁর দুই সন্তানের স্ট্যাটাস

বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন দুই বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামিকাল রোববার। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘এলআরবি’র এই প্রতিষ্ঠাতা।

এদিকে গতকাল শুক্রবার ‘এলআরবি’র অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ‘বাবুইকে (বাবা) ছাড়া চলে গেল দুই বছর, আরো ক’বছর এভাবে যাবে জানি না’ শিরোনামের এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাঁর দুই সন্তান ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব ও আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব।

তারা বলেন, ‘আল্লাহ্-পাক যেন তার জীবদ্দশায় যেসব ভালো কাজ করেছেন, যেসব দান নীরবে করেছেন; যা কেউ শুধু আমরা ছাড়া জানতেও পারে নাই; তার উছিলায় আমাদের বাবুইকে যেন জান্নাত নসিব করেন।’

তিনি কিশোর বয়স থেকেই স্বপ্ন বুনছিলেন সংগীতের জাদুকর শিল্পী। পরিবারের তেমন কেউ গানের সঙ্গে না থাকলেও শৈশব থেকেই গানের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। আধুনিক-লোকগীতি ও ক্লাসিক্যালের পাশাপাশি শুনতেন প্রচুর ওয়েস্টার্ন গান। ব্যান্ড কিংবা গিটার- দুটোতেই তিনি ছিলেন কিংবদন্তি। তাকে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত এগিয়ে নেয়ার অন্যতম অগ্রপথিক।

তার দুই সন্তানের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আমাদের মতো আপনাদেরও (ভক্তদের) অনেক কষ্টের এই ১৮ অক্টোবর। আমার বাবুই-এর জন্য সবাই মন থেকে দোয়া করবেন। তার ভক্তদের অনেকেরই জানার আগ্রহ আমরা পারিবারিকভাবে কী করছি ওই দিন, তাই এই কথাগুলো লেখা।

আমরা আমার বাবুই-এর জন্য তার জন্মদিনে ও গত বছর চলে যাওয়ার এই দিনে যতটুকু করলে আল্লাহ খুশি হন; ততটুকুই করেছি এবং করে যাব ইনশা আল্লাহ।

শুরুতেই বলে নিই, আমরা ঘোষণা দিয়ে কখনই কিছু করিনি। ঘোষণা দিয়ে করিনি, কারণ আমরা আমার বাবুই-এর কাছ থেকেই একটা জিনিস খুব ভালো করে শিখেছি যে, ‘তোমার ডান হাত দান করলে তোমার বাম হাত তা জানবে না। নিঃশব্দে কাজ করবা আল্লাহ পাকও তা পছন্দ করেন।

গত বছর আমরা চিটাগং-এ করেছি তার পছন্দের জায়গাগুলোতে। মাজারগুলোতে। এইবার পেনডেমিক-এর জন্য সবকিছু একটু থমকে গেছে। গতবারের মতো এইবারও আমাদের দুই ভাইবোনের দেশে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পেনডেমিক-এর কারণে যেহেতু দেশের বাইরে আছি, আসা আর সম্ভব হলো না।

তাই আমরা পারিবারিকভাবে আমার বাবুই-এর পছন্দের জায়গাগুলোতেই, যেখানে উনি আগেও দিতেন সেসব জায়গাতেই দোয়া খায়ের করছি। যেমন আমাদের বাসার পাশে মসজিদে মাসজুড়ে কোরআন খতম, পারিবারিকভাবে খতম আর এতিমখানায় খাওয়ানো, যেটা বাবুই নিজেই আমাদের সবসময় করার জন্য শিখিয়েছেন।

এ ছাড়া বাবুই-এর পছন্দের কয়েকটা এতিমখানায় কিছু জিনিস দিচ্ছি তার নামে। আল্লাহ পাক যেন আমাদের এই দান ও ইবাদত কবুল করে নেন। তার ভক্তদের কাছেও অনুরোধ থাকবে যারা তাকে অন্তরের গভীর থেকে ভালোবাসেন, তারা অন্তত ওই দিন দুই রাকাত নামাজ পড়ে তার জন্য দোয়া করবেন।

আল্লাহ্-পাক যেন তার জীবদ্দশায় যেসব ভালো কাজ করেছেন, যেসব দান নীরবে করেছেন; যা কেউ শুধু আমরা ছাড়া জানতেও পারে নাই তার উছিলায় আমার বাবুইকে যেন জান্নাত নসিব করেন।

আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেনে আমরা দুই ভাইবোন আর আমাদের কাছের কয়েকজন মিলে যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন তার জন্য এভাবেই যেন নিঃশব্দে করে যেতে পারি।

তার সব সৃষ্টিকে যেন আমরা রক্ষা করতে পারি। তার জন্য যা যা করার ও যতটুকু করার তা আমরা করেই যাব আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

আমাদের আশা, আপনারাও আমাদের এই পথ চলায় সাথে থাকবেন আর বাবুইকে আগের থেকেও বেশি ভালোবাসবেন আর তার জন্য অনেক দোয়া করবেন শুধু এটাই আমাদের কামনা।