রিমান্ডে দুই নেতা

বাড়াবাড়ি করলে একটা লাইভে সব মান-সম্মান চলে যাবে— ঢাবি ছাত্রীকে নুরদের হুমকি

ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলাকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেই ছাত্রীকে বিষয়টি চেপে না গেলে চরিত্র হননের হুমকি দেওয়ার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এই মামলায় গ্রেপ্তার নুরের অপর দুই সহযোগী সাইফুল ইসলাম ও নাজমুল হুদাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের কর্মকর্তারা। রিমান্ড শেষে আজ বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠিয়েছেন বিচারক।

দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য পাওয়া গেল- জানতে চাইলে ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার রাজিব আল মাসউদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল ও নাজমুলের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আর পুলিশ তদন্ত করেও কিছু তথ্য বের করেছে। মামুনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর সম্পর্কের বিষয়টি যে তাদেরকে জানিয়েছে, তার সত্যতা পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, মূলত নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থী তাদের কাছে বিচার দিয়েছিল। কিন্তু বিষয়টিতে তারা গুরুত্ব দেয়নি।

নূরদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ দুই দফায় তাকে ‘ধর্ষণ করেছে’ বলে মামলায় অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। পরে এর প্রতিকার চাইতে নুরসহ তাদের অন্য সহকর্মীদের কাছে গেলে তাকে হুমকি দেওয়া হয় বলে মামলায় বলেন তিনি।

সোশাল মিডিয়ায় চরিত্র হননের হুমকির ওই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ফেইসবুকে তাদের ১.২ মিলিয়ন সদস্য রয়েছে এবং একটা লাইভ করলে তার সব মান-সম্মান চলে যাবে বলে মেয়েটিকে হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে মেয়েটির বিরুদ্ধে অনলাইনে কুৎসা রটানোর জন্য গ্রেপ্তার সাইফুল, নাজমুল হুদা এবং মামলার আরেক আসামি আবদুল্লাহিল বাকিকে কাজে লাগানো হয়।

মেয়েটি যখন প্রতিকার চেয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন, সেই সময় একটি রেস্তোরাঁ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আসামিদের কয়েকজনের সঙ্গে তার দেখা হয় বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, দুইজনের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। কোনো এক রেস্টুরেন্টে এবং হলে তাদের কথা হয়েছে, সেগুলোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যোগাড় করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া কোন কোন ডিভাইস থেকে তাদের মধ্যে কথা বা চ্যাট হয়েছে সেসব তথ্যও সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রী ছাত্র অধিকার পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করার পর তাকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করেছিল নূর-রাশেদদের নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি।

ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদের গ্রেপ্তারের সময় একটি মেসে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখা যায়, কারও মোবাইলে সিম নেই। সবাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলছে, চ্যাট করছে, যোগাযোগ করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রী গত ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় নুরুল হক নূর ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন।

পরে শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা করেন সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে। এই মামলায় গত রবিবার রাতে দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও নাজমুল হুদাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়।