ঢাবি ছাত্রের আত্মহত্যা— যা বললেন তার বোন

শুভজ্যোতি মণ্ডল

রাজধানীর আদাবরে বোনের বাসায় শুভজ্যোতি মণ্ডল (২২) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরের কোন এক সময় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে বিকেলে সংবাদ পেয়ে আদাবর মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর রোডের ১৪১ নম্বর বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শুভজ্যোতি ঢাবির চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগে ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

শুভজ্যোতির পরিবারের সদস্য ও সহপাঠীরা জানান, প্রথম বর্ষে থাকাকালীন সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে প্রপোজ (প্রেমের প্রস্তাব) করেছিলেন। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী তার প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়াতে সব সময় মনমরা হয়ে থাকতো শুভজ্যোতির। এ নিয়ে সে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। তাপসী মণ্ডল জানান, আমরা চিকিৎসা এবং কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। তবে শেষ রক্ষা হলো না।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুভজ্যোতির এক সহপাঠীরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মানসিক সমস্যাজনিত কারণে আত্মহত্যাপ্রবণ ছিল শুভজ্যোতি মন্ডল। সম্প্রতি এটি আরও বেড়ে যায়। বিষয়টি পরিবারসহ অনেকেই অবগত ছিল। তবে পরিবারের লোকজন তার বিষয়ে অবহেলা করেছে বলে ধারণা তার।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আমরা আত্মহত্যার মতো এ ধরনের কোন ঘটনা আমরা প্রত্যাশা করিনা। তবে আত্মহত্যার কারণগুলো খুঁজে বের করে যথাযথ কাউন্সেলিং করতে পারলে আত্মহত্যার হাত থেকে আমাদের সন্তানরা রক্ষা পাবে বলে মনে করি।

এ ব্যাপারে শুভজ্যোতির বোন তাপসী মণ্ডল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। কিন্তু বাহ্যিকভাবে সেটা দেখা যেত না। আমি ঢাকা শহরের বেশ কয়েকজন ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ট্রিটমেন্টও করেছি এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধের ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, গতরাতে (আত্মহত্যার আগের রাতে) শুভজ্যোতি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে থাকে খাবার খেয়ে নিতে বললে সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। পরবর্তীতে সে আমার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি দরজা ধাক্কা দিয়ে তখন ঢুকলে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এসময় আমি তাৎক্ষণিক আমার স্বামীকে বাসায় চলে আসতে বলি। আমি কেয়ারটেকারের মাধ্যমে দরজা ভাঙার চেষ্টা করি ততক্ষণে আমার স্বামী চলে আসে। পরে দরজা ভেঙ্গে ঢুকলে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

তাপসী মণ্ডল আরও জানান, শুভজ্যোতি একজন শিক্ষার্থীকে খুব পছন্দ করতো এবং প্রপোজও করেছিল। কিন্তু সেই শিক্ষার্থী তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার কারণে সে সব সময় ডিপ্রেশনে থাকতো। এই ডিপ্রেশনে থেকে আত্মহত্যা করেছে বলে আমি মনে করি।