বিসিএসের ভাইভা: নিজেকে তুলে ধরাটাই মূখ্য বিষয়

মো: সাফায়েত জামিল বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটে (ব্রি) সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ৩৮তম বিসিএসে গণপূর্ত (সিভিল) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে চাকরিতে যোগদানের অপেক্ষায় আছেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। বিসিএস পরীক্ষায় তার অভিজ্ঞতাসহ নতুনদের জন্য নানান পরামর্শ নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন সাফায়েত জামিল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— আবদুর রহমান

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন কবে থেকে?
সাফায়েত জামিল: ছোটবেলা থেকেই আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। আল্লাহর অশেষ রহমতে নটরডেম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করার পর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার সুযোগ পাই। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আব্বা-আম্মাও চাইতেন যেনো আমি বিসিএস ক্যাডার হই। বিসিএস এ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় বেশি। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে দেশেই থাকার ইচ্ছা ছিলো তাই বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকুরী করাই স্বপ্ন ছিলো। আল্লাহ তায়ালার রহমতে আমি ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস গণপূর্ত (সিভিল) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কিভাবে স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং এই ক্ষেত্রে পড়াশোনার রুটিন কেমন ছিলো?
সাফায়েত জামিল: বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষ থেকেই বিসিএসের টুকটাক প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। বিসিএস পরীক্ষার প্রিলি সিলেবাস এবং বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান দিয়েই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু এবং যাদের স্বপ্ন বিসিএস তাদেরও শুরুতেই সিলেবাস ও বিগত সালের প্রশ্ন পর্যালোচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। প্রিলির জন্য প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা সময় করে বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাসের বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখা করেছি। রিটেনের সিলেবাস অনেক বেশি তাই প্রতিদিন ১০ ঘন্টার মতো পড়ালেখা করেছি পুরোপুরি প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। প্রিলি রিটেনের পড়ার মাধ্যমে ভাইভার প্রস্তুতিও অনেকাংশে হয়ে যায়। ভাইভার জন্য সুনির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। তারপরও সাম্প্রতিক ইস্যু, নিজ জেলা সম্পর্কে প্রস্তুতি নিয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতির পথে কোনো বাঁধা-বিপত্তি ছিলো কি?
সাফায়েত জামিল: প্রস্তুতির পথে কোনো বাঁধা-বিপত্তি ছিল না। আব্বা-আম্মার পূর্ণ সমর্থন ছিল। উনারা আর্থিক ও মানসিকভাবে শক্তি যুগিয়েছে। তাদেরও চাওয়া ছিলো আমি বিসিএস ক্যাডার হয়ে স্বপ্ন পূরণ করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাইভা ও রিটেন নিয়ে বিস্তারিত বলুন?
সাফায়েত জামিল: বিসিএস পরীক্ষায় শুধু জেনারেল বা শুধু টেকনিক্যাল এর জন্য ৯০০ নাম্বার এর পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। বোথ ক্যাডারের জন্য মোট ১১০০ নাম্বারের পরীক্ষা। রিটেনের পড়া অনেক বেশি। আবার পড়ালেখার ধরণও প্রিলির চেয়ে আলাদা। তাই প্রতিটি বিষয়ে অনেক সময় দিতে হয়।

বিজ্ঞানের ছাত্ররা গণিত, মানসিক দক্ষতা, সাধারণ বিজ্ঞানে কলা বা ব্যবসা অনুষদের তুলানায় একটু বেশি সহজেই প্রস্তুতি শেষ করতে পারে। কলা বা ব্যবসা অনুষদের পরীক্ষার্থীদের এই বিষয়গুলাতে একটু বেশি সময় দিতে হয়। প্রিলি রিটেন দুটাতেই ইংরেজিতে যারা ভালো করে তাদের জন্য পাস করা সহজ। তাই ইংরেজিতে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিবারই রিটেনে প্রায় এক তৃতীয়াংশ ফেল করে যার বড় কারণ ইংরেজিতে ভাল করতে না পারা। বাংলাদেশ বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিস্তারিত জানা এবং সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রিটেনের বিষয় গুলোর জন্য বাজারে প্রচলিত এক সেট ভালো গাইড বই অনুসরণ করা যেতে পারে।

প্রিলি ও রিটেনের অনেক পড়া ভাইভাতে কাজে লাগে। প্রিলি ও রিটেনের সুনির্দিষ্ট সিলেবাস আছে কিন্তু ভাইভার জন্য তা নেই। বিসিএস ভাইভা বোর্ড অনুযায়ী প্রশ্নও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। ভাইভায় নিজেকে তুলে ধরাটাই মূখ্য বিষয়। ভাইভা বোর্ডে সব প্রশ্নের উত্তর পারতেই হবে এমন না এবং সব প্রশ্নের উত্তর পারা সম্ভবও না। এই না পারাটাই কিভাবে বোর্ডকে প্রকাশ করবে এটাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক সময় নার্ভাসনেস এর কারণে অনেক সহজ প্রশ্নও তালগোল পাকিয়ে ফেলে অনেকে। ভাইভা বোর্ডে নিজেকে আত্নবিশ্বাসী রাখতে হবে এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে সোজা না করে দিতে হবে অযথা বোর্ডের সময় নষ্ট করা যাবে না। ভাইভায় নিজের সম্পর্কে বলা, নামের অর্থ, নামের সাথে বিখ্যাত ব্যক্তির নামের মিল থাকলে সেই সব বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানা, নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জানা কাজে দিবে। মোটকথা ভাইভায় একজন প্রার্থী নিজেকে প্রকাশ করবে একজন আত্নবিশ্বাসী, নম্র, ভদ্র হিসেবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়াশুনার পাশাপাশি নন-ফিকশন কিংবা বাইরের বই পড়ার ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?
সাফায়েত জামিল: পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়লে জ্ঞান বাড়বে এবং একঘেয়েমি ভাব কাটবে। তবে রিটেনের প্রস্তুতির সময় বিসিএস সংশ্লিষ্ট বই পড়াই ভালো। কারণ রিটেনের জন্য যে সময় পাওয়া যায় তাতে সিলেবাসের পড়া শেষ করতেই অধিকাংশ সময় চলে যায়। তবে একঘেয়েমি ভাব কাটানোর জন্য মাঝেমধ্যে বিসিএস সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ বা গল্পের বই পড়া যেতে পারে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার আইডল কে?
সাফায়েত জামিল: মা-বাবাই আমার আইডল। তারা সব সময় আমাকে নিয়ে ভাবে। আমার সুখ শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাধারণত দেখা যায় ক্যাডার হওয়ার পর দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার একটা প্রবণতা সৃষ্টি হয়, এক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কি?
সাফায়েত জামিল: একথা সত্য যে অনেকে ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করে দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির সাথে জড়িয়ে পড়ে। আবার এমন অনেক আছে যারা সততা, দক্ষতার সাথে কাজ করে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সহায়তা করছে। আমাদেরকে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। সরকার যদি দুর্নীতি যারা করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে তাহলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। সর্বোপরি আমাদের কে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন যারা বিসিএস দিতে চান বা বিসিএস এ ভালো কিছু করতে চান তাদের জন্য পরামর্শ কি?
সাফায়েত জামিল: বাংলাদেশে যতো চাকরি আছে বিসিএস সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ক্যাডার সার্ভিসে জয়েন করে সরাসরি দেশের উন্নয়নে অংশ নেয়া যায়। আমাদের দেশের অধিকাংশই এখন ক্যাডার সার্ভিসের দিকে আকৃষ্ট। নিয়মিত পড়ালেখার মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করার স্বপ্ন পূরণে সম্ভব। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে বিসিএস এ যোগদানই বড় কথা নয়। বরং সততা, দক্ষতার সাথে দেশের জন্য কাজ করতে পারাটাই বড় ব্যাপার। যেকোনো চাকরিতে থেকেই দক্ষতা ও সততার মাধ্যমে দেশের জন্য কাজ করা সম্ভব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।
সাফায়েত জামিল: আমি ৩৮তম বিসিএস গণপূর্ত (সিভিল) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। আর কিছুদিন পরই সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একজন বিসিএস ক্যাডার হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করবো। চাকরি জীবনে সততা দক্ষতার সাথে কাজ করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই। আল্লাহ সহায় থাকলে আমার যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা দিয়ে আমার কর্মজীবন অতিবাহিত করতে পারবো বলে আশা রাখি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সাফায়েত জামিল: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ।