‘আমার ধুলোবালি জমা বই, আমার বন্ধুরা সব কই?’

করোনায় জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। প্রিয় ক্যাম্পাস রেখে ঘরবন্দি হাজারো শিক্ষার্থী। যাদের পদচারণায় মুখর থাকতো চিরসবুজের এই প্রাঙ্গণ। বন্ধুদের সাথে গল্প-আড্ডা, মাঠে খেলাধুলা, বটতলায় খাওয়া, ক্যাফেতে গানের আসর- সব কিছুই আজ অতীত। এ শুন্যতায় সুরে সুরে শিক্ষার্থীরা গাইছেন, ‘আমার ধুলোবালি জমা বই, আমার বন্ধুরা সব কই?’

এদিকে মাতৃটান অগ্রাহ্য করে প্রাণের ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ফিরছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। ঠাঁই নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া, ইসলামনগর ও আমবাগান এলাকায়। আগত শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই টিউশনি, চাকরি ও ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক পড়াশোনা, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিংবা নিতান্তই ক্যাম্পাসের প্রতি আবেগ ও ভালোবাসার কারণে অগ্রিম চলে এসছেন।

এমনকি ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার সুবাদেও অনেক ছাত্র আগেভাগেই এসে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসগুলোতে। এতে বিকেল হলেই সরগরম হয়ে উঠছে নির্জন ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থীরা ফিরে পাচ্ছে পুরানো আমেজ। তবে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরতে এখনো অনেক পথ বাকি মত সংশ্লিষ্টদের।

গেরুয়ার একটি মেসে অবস্থানরত গণিত বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন সোহেল বলেন, ‘বাড়িতে আসলে ছাত্র জীবনের অনেক খানিই নিজের মধ্যে থেকে হারিয়ে যায়। তবে মাতৃস্নেহের ভুলে এখানে ফেরাটাও কঠিন। কিন্তু কিছু কিছু বাস্তবতার ভিন্নতা থাকে। এখানে এসে টিউশনি করাচ্ছি আর নিজের ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক কিছু পড়াশোনা গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একজন ছাত্রনেতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকমাস না থেকেই ক্যাম্পাস জীবনের মর্মার্থ অনুধাবন করেছি। ক্যাম্পাসের টানেই মূলত আগেভাগে এখানে আসা। ক্যাম্পাস রাজনীতিও এখন নিশ্চল অবস্থায় রয়েছে। তাই নিজেকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করছি আর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।

স্নাতক শেষবর্ষে অধ্যয়নরত ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের প্রতি একটি সুক্ষ আবেগের জায়গা থেকে আসলেও মূলত চাকরি কেন্দ্রিক পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বাড়ি থেকে এসেছি। হল জীবনে অভ্যস্ত হলেও এখন ক্যাম্পাসের পাশে একটি মেসে থাকছি আর পড়ালেখাটা নিজের মতো করে করছি।’

এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের একজন শিক্ষক বলেন, বাড়িতে বসে থেকে থেকে শিক্ষার্থীরা তারুণ্যের ভারে নিমজ্জিত। তারুণ্যের ভার মুক্ত হতে অনেক শিক্ষার্থী তাই আগেভাগেই চলে আসছে ক্যাম্পাসে। করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক সময়ে তাদের চলাফেরা একটু উন্মুক্ত হওয়া উচিত, এতে মানসিক অবসাদ দূর হবে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই বাড়ির বাইরে ও ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করতে হবে।