মৃত ব্যক্তিদের না বলা কথা জানিয়ে দেন যে ব্যক্তি

মৃত্যু
বিল এডগার বেশ কিছু অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মৃত ব্যক্তির প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন

বিল এডগার মৃত ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হাজির হয়ে তিনি তাদের হয়ে লোকজনের কাছে অপরাধের কথা স্বীকার করেন। এজন্য তাকে নানা ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়। তবে এই কাজটির জন্য তাকে অর্থ দিতে হয়।

যেভাবে শুরু

বিলের মাথায় যখন এই কাজটি করার আইডিয়া আসে তখন তিনি অস্ট্রেলিয়াতে মৃত্যুপথযাত্রী এক রোগীর ব্যক্তিগত গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করছিলেন।

বিল বলেন, ‘‘মৃত্যুর বিষয়ে আমরা কথাবার্তা বলতাম, মৃত্যুর পর জীবন কেমন হবে- এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। একদিন তিনি বললেন, ‘আমি আমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য কিছু করতে চাই’। আমি তখন তাকে ওই অনুষ্ঠানে নিজের সম্পর্কে নিজের প্রশংসা করার ধারণা দেই।’’

কিন্তু লোকটি তখন বলেন যে শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানে তিনি যেসব কথা বলতে চান সেগুলো তার পরিবার ও বন্ধুরা পছন্দ করবে না। ফলে তারা সম্ভবত তার লিখে যাওয়া বার্তা পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন অথবা তারা রেকর্ড করা অন্য কিছু বাজাবেন।

তিনি বলেন, তখন আমি তার হয়ে এই কাজটা করার প্রস্তাব দেই এবং এভাবেই কাজটা শুরু হয়ে গেল।

কতো খরচ

এখন এই কাজ করাটাই তার জীবিকা নির্বাহের উপায়। তিনি একজন ‘কফিন কনফেসর’ যার অর্থ, ‘ফিউনারালের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমি উঠে দাঁড়াই, খামের ভেতর থেকে একটা কাগজ বের করি এবং কফিনে শায়িত লোকটির না বলা কথাগুলো সেখান থেকে পাঠ করি।’ এজন্যে তিনি নেন প্রায় ১০,০০০ অস্ট্রেলিয় ডলার।

এই অর্থের বিনিময়ে তিনি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে হাজির হন, তার আগে মৃতদেহের পাশে সারা রাত ধরে বিলাপ করেন, উইল পাঠ করে শোনান এবং মৃত ব্যক্তির বাড়ি থেকে স্পর্শকাতর জিনিসপত্র সবার অগোচরে সরিয়ে নেন।

না বলা কথা

একবার তিনি এরকম এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বক্তব্য রাখছিলেন। তখন মৃত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু হঠাৎ করে তার কথা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন।

‘‘আমি তাকে বসতে বলি, বলি চুপ করে থাকতে। তাকে বলি তার বন্ধু যেসব কথা বলে গেছে, আমার বলার জন্য, সেসব শুনতে। কথাটা হচ্ছে- তিনি যখন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন তার ঘনিষ্ঠ ওই বন্ধু তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার ব্যাপারে তাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলেন।’’

বিল জানান, এর পর ওই ব্যক্তি ‘‘সুর সুর করে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে চলে যান।’’ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে আরো কয়েকজন ব্যক্তিকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিউনারাল সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।

বিল এডগারের কাজ কেমন হয়েছে সে বিষয়ে তার ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ফিডব্যাক, রিভিউ কিংবা অভিযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। তবে বিল বলেন, ‘বিষয়টা যে খুব ভালো তা নয়, কিন্তু এটা তো তাদের ফিউনারাল, ফলে তারা যেভাবে এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চান, সেভাবেই যেতে পারবেন না কেন?’ [সূত্র: বিবিসি বাংলা]