প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে যেভাবে সৌদি গেলেন কুলসুম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোর্কণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে উম্মে কুলসুম। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সৌদি আরবে গিয়েছিল এই কিশোরী। সেখানে গিয়ে চাকরি আর বেতনের পরিবর্তে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশটির একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। স্বপ্নযাত্রা ধূলিসাৎ হয়ে অবশেষে লাশ হয়ে দেশে ফিরল সে।

কুলসুমের বয়স মাত্র ১৪ বছর বয়স হলেও বয়স বাড়িয়ে ২৬ করে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন তৈরি করেন দালাল রাজ্জাক। ২০১৯ সালে আঞ্চলিক অফিস থেকে পাসপোর্ট তৈরি করে রিক্রুটিং এজেন্ট মেসার্স এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানো হয় তাকে। পাসপোর্টের জন্মতারিখ অনুসারে বর্তমানে কুলসুমের বয়স ২৭ বছর ৫ মাস ৩০ দিন।

কুলসুমের বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি গত ১৭ আগস্ট জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে তার মেয়ের লাশ ও আট মাসের বকেয়া বেতন ফেরত পেতে একটি লিখিত আবেদন করেন।

লিখিত অভিযোগ তিনি বলেন, স্থানীয় দালাল রাজ্জাক মিয়ার মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১৭ মাস আগে মেসার্স এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের (আর এল নং-১১৬৬) মাধ্যমে কুলসুমকে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব পাঠানো হয়। সেখানে গৃহকর্মী হিসেবে যোগদানের পর থেকেই আমার মেয়ে কুলসুমের উপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করে মালিকপক্ষ। নির্যাতনের কারণে মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্যে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

গত ৯ আগস্ট সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় কুলসুমের। পরে শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। শনিবার দুপুরে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।

কুলসুমের প্রাথমিক শিক্ষা সনদ সূত্রে জানা গেছে, কুলসুম নাসিরনগর নুরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.০৮ জিপিএ পেয়েছে। তার রোল নম্বর ৫৪৭৯।

কুলসুমের মা নাসিমা বেগম বলেন, মেয়ে মারা যাওয়ার পর একাধিক বার প্রতিকার চেয়ে নাসিরনগর থানা পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু, তারা কোনও পাত্তা দেননি বলে অভিযোগ করেন। আমি আমার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক জানান, দুই দেশের বিষয় হওয়ায় নাসিরনগর থানা পুলিশের পক্ষে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা কোনো ধরনের নির্দেশনা পাইনি।