ঘটনা, দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে বহু মানুষের

এক একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা আলোড়ন তুলছে দেশব্যাপী। মেজর সিনহা হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই দুর্বৃত্তের হামলায় দিনাজপুরের ঘোরাঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম মারাত্মকভাবে আহত হন। ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা আশংকামুক্ত নয় এখনো। ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন আসামীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দিন না ফুরোতেই নারায়নগঞ্জের বড় তল্লা মসজিদে (৪ সেপ্টেম্বর) এসি বিস্ফোরণে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মারা গেছেন ২৩ মুসল্লী।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মসজিদের নীচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাস কোম্পানীর পাইপ লাইনের ফুটো থেকে এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত। নি:সরিত অতিরিক্ত গ্যাসের চাপে মসজিদের এসিগুলো বিষ্ফোরিত হয়। অভিযোগ আছে, গ্যাস লিকেজ সমস্যা দূর করতে বারংবার আবেদন সত্ত্বেও তিতাস গ্যাস কোম্পানি তা আমলে নেয়নি। যে কারণে শেষপর্যন্ত এতবড় একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ গেছে নিরীহ মুসল্লীদের। এর দায় তিতাস গ্যাস কীভাবে এড়াবে ?

কিছুদিন পরপর ঘটা এমন ঘটনাগুলো মানুষের মাঝে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। সব ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়। দেওয়া হয় নানা প্রতিশ্রুতি। ঘটে যাওয়া ঘটনার নানা দৃশ্য ও বর্ণনা শুনে আমাদের হৃদয় হাহাকার করে উঠে। আমাদের যদি এমন মনে হয় তাহলে দুর্ঘটনার শিকার মানুষের স্বজনদের মানসিক অবস্থা কেমন? ভাবাও কষ্টকর। এসব করুণ ঘটনায় নিয়ত ভাঙছে হৃদয়। নিরাপত্তাসংকট কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমাদের। এমন কোন উপায়ও নেই এই বৃত্ত থেকে বের হওয়ার। স্রষ্টার সাহায্য ব্যতীত উত্তরণের কোন পথ নেই।

এসব ঘটনার কারণে আমরা যারা অভিভাবক তারা নিজেদের সন্তান, স্বজন নিয়ে আতংকিত হই। কবে এসবের অবসান হবে বলা মুশকিল। মনকে সান্তনা দেওয়া যায়না। শুধু আমাদের দেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও ঘটছে এ ধরণের ঘটনা। নিরীহ মানুষ হত্যার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা ঘটনায়ও প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। প্রতিটি দুর্ঘটনায়ই আসলে দু:খজনক এবং মন কেঁদে উঠে। গা শিউরে ওঠা ঘটনাগুলো হৃদয়ে নাড়া দেয় । 

মানুষ হত্যার বিচার যেমন হতে হবে তেমনি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানপূর্বক এর বিহিত ব্যবস্থাও নিতে হবে। সতর্ক, সচেতনতা জরুরী আমাদেরও। অনেকসময় মানুষের অসচেতনতার কারণে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে অনেকে আহত, নিহত হন।

এমন অমানবিক ও মনোকষ্টের ঘটনা আর না ঘটুক। মানুষ নিরাপদে থাকুক। বেঁচে থাকুক সব প্রাণ। কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে অমানবিক ঘটনাগুলোর সমাপ্তি টানতে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে আরেকটি ঘটনা, দুর্ঘটনা ঘটার পূর্বেই।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক