জেএসসি-জেডিসি: পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণসহ ৬ প্রস্তাব

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে চলতি বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিলসহ ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সংকোচন এবং বিষয় কমিয়ে আগামী ডিসেম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরীক্ষা ছাড়াই নবম শ্রেণিতে উঠবে শিক্ষার্থীরা।

জেএসসি ও জেডিসিতে এবার মােট পরীক্ষার্থী প্রায় ২৬ লাখ। জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাসংক্রান্ত প্রস্তাব ঈদের আগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু)। বেডুর দেওয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাে. মাহবুব হােসেন। তিনি বলেন, সব দিক দেখেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে এখন তা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও পাবলিক পরীক্ষাগুলাে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) জানিয়েছে, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮৪টি দেশ পাবলিক বা এ ধরনের পরীক্ষা হয় বাতিল নয়তাে স্থগিত করেছে।

দেশের বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে বেডু। তারা মূলত জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে।

বেডুর ছয় প্রস্তাবের প্রথমটি হচ্ছে- আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যদি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা যায় তার ভিত্তিতে জেএসসি জেডিসি নেয়া। ওই তিন মাস শ্রেণি কার্যক্রম চললেও নির্ধারিত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। এ জন্য শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সংকোচন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। তারা বলছে, সংকুচিত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে আগের মতােই ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব।

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি করা হয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্তও করোনা সংক্রমণের বাস্তবতা ধরে নিয়ে। এ ক্ষেত্রে পাঠ্যসূচি সংকোচন করে ডিসেম্বরে শুধু বহু নির্বাচনী প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় এক ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে পরীক্ষার মােট বিষয়ের সংখ্যা কমানাের কথা বলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলছে, জেএসসি পরীক্ষা চালুর আগে অষ্টম শ্রেণিতে যে বৃত্তি পরীক্ষা হতাে তাতে কেবল বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা হতাে।

চতুর্থ প্রস্তাবে সব কটি বাের্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রশ্নপত্র ছাপার ক্ষেত্রে যে দীর্ঘ সময় লাগে, সেটা কমবে। এ ছাড়া সব বোর্ডের ফলাফল সাম্যতা আসবে।

পঞ্চম প্রস্তাবে সংকুচিত শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির আলােকে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদি নভেম্বর থেকে এক মাসের জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে এটি করা যাবে। বিদ্যালয়কেন্দ্রিক এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধু অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার ফল শিক্ষা বাের্ডগুলােতে পাঠাতে হবে। এখানেও আসন বিন্যাসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিন্ন সেটে প্রতিদিন দুই পালায় পরীক্ষায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের তবে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার জন্য মনােনয়ন দেওয়া যেতে পারে।

সর্বশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিদ্যালয়ে যদি শ্রেণি কার্যক্রম আদৌ চালু করা সম্ভব হয় তাহলে কোনাে ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। এ জন্য একটি শিক্ষাবর্ষকে বাতিল না করে শিক্ষাক্রমের অবশিষ্ট অংশকে পরবর্তী শ্রেণিতে সমন্বয় করা যেতে পারে।