বিসিএস প্রস্তুতিতে ৫ পরামর্শ

বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরি যেন সোনার হরিণের চেয়েও দামি। বিসিএসসহ সকল চাকরিতে এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। বিসিএসে মাত্র ২ হাজার পদের বিপরীতে ৪ লাখেরও বেশি প্রার্থী আবেদন করে। অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রেও আবেদন সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর।

সব শিক্ষার্থী একটি ভালো জবের স্বপ্ন দেখেন নিজের জন্য এবং পরিবারের জন্য‌। এই রণাঙ্গনে টিকে থাকতে অনেকেই শুরু থেকে সচেতন ও নিবেদিত প্রাণ। আর চাকরির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে টিকে থাকতে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ।

চাকরির বাজারের দুর্দশা দেখে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকে এবং জব রিলেটেড বই পত্র পড়তে আরম্ভ করে; যা সমীচীন নয়। তবে সময় নষ্ট করাও একদম উচিত নয়।

দেখুন: চলতি মাসেই ৪২তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি

তাহলে কী করবেন? আপনার বেসিকটাকে স্ট্রং করার সময় এই তিন বছর। গাইড মুখস্ত করে কখনো ভালো জব পাবেন না। জবের ময়দানে শেষ হাসিটা সেই হাসবে যার বেসিক খুব শক্তিশালী। তাই এই তিন বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রেজুয়ানুল হক-

১) আপনার অনার্সের বিষয়ের ওপর জোর দিন। প্রথম তিন বছরে সিজিপিএ এগিয়ে রাখুন। পরে চাকরির ও ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা একসঙ্গে করতে গিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারেন। যাতে ৩.০০ এর উপরে এমনকি সম্ভব হলে ৩.৫০ থাকে।

অনেকেই ভাবেন সাবজেক্ট পড়ে কি হবে? জবের ক্ষেত্রে এটাতো লাগবে না। আমি বলব আমি ভুল ভাবছেন। যেকোন ভাইভাতে আপনাকে অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় থেকেই জিজ্ঞাসা করা হবে। আপনি যে সাবজেক্টেরই হোন না কেন। আর নিজের সাবজেক্টের কোশ্চেন না পারায় ভাইভা ফেল করেছে এমন মানুষের অভাব নেই। তাছাড়া আপনি যদি শিক্ষক হয়ে যান তাহলে তো আর কথাই নাই।

২) চাকরির লেখাপড়ায় সাধারণত ৪টি বিষয় থাকে (বিসিএসে আরো কিছু বিষয় আছে)। ইংরেজি, বাংলা, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। এগুলোর মধ্যে ইংরেজি আর গণিত সবার জন্য পার্থক্য গড়ে দেয়। আর এমন প্রার্থীর সংখ্যা খুব কম যারা ৪টিতেই সমান পারদর্শী। একজন সম্মানিত শিক্ষক এটি বুঝাতে গিয়ে বলেছিলেন দেশে তামিম, মুস্তাফিজ অনেক থাকলেও সাকিব একজনই। সো ট্রাই টু বি আ সাকিব।

ইংরেজিঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পর্যন্ত আপনি যতটুকু গ্রামার পড়েছেন ততটুকুই যথেষ্ট। শুধুই মাথায় রাখলেই হবে। ইংরেজিতে বেসিক স্ট্রং করতে ইংরেজি পত্রিকা বুঝে বুঝে পড়ুন। নতুন শব্দগুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন। ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং কিছু কিছু অনুশীলন করতে পারেন। বন্ধুদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করুন। আর গাইড থেকে আপাতত দূরে থাকুন।

গণিতঃ চাকরির ক্ষেত্রে গণিত বড় একটি ফ্যাক্টর। এখানে ভালো থাকলে চাকরির জন্য মূল প্রস্তুতির সময় অনেক রিলাক্সড ফিল করবেন। গণিতে ভালো করার জন্য এ বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিগণ বোর্ড বইয়ের গণিত অনুশীলন করতে বলেন। সুতরাং ষষ্ঠ-নবম শ্রেণীর গণিত আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। নিজে না পারলে যিনি পারেন-বন্ধু/ক্লাসমেট যেই হোক-তার সহযোগিতা নিবেন।

সাধারণ জ্ঞানঃ এই বিষয়ে আপনার জন্য পত্র-পত্রিকাই যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক, সম্পাদকীয়, বাণিজ্য ও খেলাধুলার পাতায় বিশেষভাবে নজর দিন। মাসে একটি কারেন্ট এফেয়ার্স পড়লে আরো ভালো হয়।

৩) এই তিন বছরে আপনি মৌলিক কিছু বই পড়ুন। যেমন: অসামাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং প্রধানমন্ত্রীর বই যেমন: ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘সাদা-কালো’ ইত্যাদি। বিভিন্ন উপন্যাস যেমন মা- আনিসুল হক, জোসনা ও জননীর গল্প, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই যেমন: একাত্তরের দিনগুলি, আমি বীরাঙ্গনা বলছি, দ্যা রেইপ অব বাংলাদেশ, একাত্তরের ডায়েরি ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত বই যেমন বাংলাদেশ ইতিহাস পরিক্রমা- কে এম রাইসুদ্দিন, দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব সভ্যতা, আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন ঐতিহাসিক, সাহিত্য, দেশি-বিদেশি, আত্মজীবনীমূলক বই পড়তে পারেন। অনেকে কবিতা পড়তে ভালোবাসেন, পড়ুন। নবম শ্রেণির ভূগোল পড়া যেতে পারে। মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞানের বেসিক ধারণা রাখা ভালো। এজন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান (সাধারণ বিজ্ঞান) বই পড়া যেতে পারে।

উপর্যুক্ত প্রতিটি কথা অভিজ্ঞতার আলোকে বলা, মুখস্থ কথা নয়। তাই এই কথাগুলো অনুসরণ করলে আমার মনে হয় জব সেক্টরে প্রতিযোগিতার মহারণে আপনি ভালো করবেন।

৪) আর যারা চতুর্থ বর্ষে আছেন তারা চাকরির মূল প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। দিনে ১০/১২ ঘন্টা পড়ার জন্য ব্যয় করুন। সম্ভব হলে একটির বেশি টিউশনি নয়, অথবা একটিও নয়। পার্টটাইম জব ছেড়ে দিন। আর যদি সম্ভব না হয় তো খুব পরিশ্রম করুন। টিউশন, পার্টটাইম জব করেও পড়া যায়। এসব মেইনটেইন করেও ভালো জব করছেন এমন উদাহারণ কম না। দরকার পরিশ্রমের।

অনেকেই জানতে চান জব কোচিং করবেন কিনা?

আসলে এটা পারসন টু পারসন ভেরি করে। ৩৮তম বিসিএস ক্যাডারদের গ্রুপে একটি পোল দেওয়া হয়েছিল। তাতে প্রায় ৪০০ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন। কোন কোচিং না করেই ক্যাডার হয়েছেন এমন ক্যাডারই বেশি। তবে আমি বলি কোচিং সেন্টারে যাতায়াতে বেশি সময় নষ্ট না হলে করতে পারেন। এতে পড়ালেখায় স্পৃহা আসবে। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্তুতিকে শাণিত করতে পারবেন।

তাছাড়া কোচিংয়ে যারা ক্লাস নেন তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষ। তাদের গাইডলাইন আপনাকে অনেক সহযোগিতা করবে। ফলে লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না বোধ হয়।

৫) যারা মাস্টার্সে আছেন তাদের কিছু বলার নেই। আপনারা ইতোমধ্যেই চাকরির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে আমি বলব চেষ্টা করে যান এবং কখনো হতাশ হবেন না। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি আপনার রিজিকের ব্যবস্থাও করেছেন। আপনাকে চেষ্টার মাধ্যমে একটু খোঁজে নিতে হবে। কারণ দুনিয়া অলৌকিক নিয়মে চলে না। এখানে মাধ্যম ছাড়া প্রায় কিছুই হয় না।

শেষে একটি কথা না বললেই নয়। আমাদের সমাজ আপনার পড়াশোনা ও ডিগ্রির মূল্যায়ন করবে চাকরি দিয়ে। আপনার সার্টিফিকেট যত মোটাই হোক না কেন ভালো জব না পেলে সমাজের কাছে তা খড়কুটো আর আপনি চির অপদার্থ ছাড়া কিছুই না।

লেখক: ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত