খাদ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জীবনের শেষ বিসিএসে ক্যাডার কাহারুজ্জামান

হার না মানা বন্ধু আমার! একেবারে খাদ থেকে উঠে আসা, আর খাদে পড়ে গিয়ে আবার উঠে আসা- এ দু’য়ের পার্থক্য অনেক। বন্ধু কাহারুজ্জামান হলো ‘ওপরে থেকে খাদে পড়ে গিয়ে আবার উঠে আসা একজন মানুষ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের বন্ধু আমরা। প্রথম তিনটা বিসিএস (৩৩, ৩৪, ৩৫) সে দিতে পারেনি। একসময় সে একাডেমিক্যালি চার বছর পিছিয়ে যায়। অর্থাৎ আমরা যখন অনার্স শেষ করি, তখন তাঁর আবার ‘নতুন করে শুরু’।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে তাঁর এমন অবস্থা দেখে আমাদের মনোবল ‘হারালেও’ তাঁর মনোবল হারায়নি। আজ সে ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলো। অভিনন্দন, অভিনন্দন, অভিনন্দন।

পড়ুন: ৩৮তম বিসিএস: স্বামী শিক্ষা ক্যাডারে ইতিহাসে প্রথম, স্ত্রী অষ্টম

গত ফেব্রুয়ারিতে বিসিএস ভাইভা দেয়ার পর বিপিএসসি’র সামনে এই ছবিটা তুলে সে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, ‘জীবনে একটা স্বপ্ন ছিল বিসিএস-এ ভাইভা দেওয়া। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সেটা পূরণ করলেন ৩৮তম বিসিএস এর মাধ্যমে।’

আলহামদুলিল্লাহ্, শুধু ভাইভা দেয়াই নয়, আজ সে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তও হলো। ভাইভা দেয়ার আগে বিসিএসসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সে ‘ইজি ভোকাবুলারি’ নামে একটি বইও প্রকাশ করেছে। ওর কর্মস্পৃহা, হার না মানার মতো সাহস- আমাকে অভিভূত করে তোলে।

আরও পড়ুন: ৩৮তম বিসিএসে সেরা চমক, স্বামী-স্ত্রী দুজনই প্রশাসন ক্যাডার

ওকে নিয়ে আমাদের এক ছোট ভাই মো. পলাশ মিয়া আজ লিখেছে, ‘এই সেই কাহার ভাই, যাকে কোনদিন হতাশ হতে দেখিনি! নিজের চোখের সামনে শত চাকরির পরীক্ষা দিতে দেখেছি, আবার ব্যার্থ হতে দেখেছি, তবুও হতাশ হতে দেখিনি। মুখে শুনেছি আলহামদুলিল্লাহ! তখন ভাইকে একটি কথাই বলতাম, ভাই সামনে ভালো কিছু আছে। ভাই বলতো, হয়ত! ভাই এমন একজন মানুষ, যাকে সূর্যসেন হলের সবাই চেনে। ভাইয়ের হলের ছোট ভাই হওয়ার কারণে ভাইয়ের অজানা অনেক কিছুই জানা হয়ে গিয়েছিলো!

জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক অকুতভয়ী বীরের নাম কাহার ভাই! সূর্য সেনের কাহার ভাই!ভাই আমার জীবনে অনেক বড় অনুপ্রেরণা! আমার জীবনে এখনো হতাশার কোন ছায়া আসলেই, মনে পড়ে আমারতো একটা কাহার ভাই ছিল, যে হাজারো পরিক্ষায় ব্যার্থ হয়েও কখনো হতাশ ছিলনা। আমারও জীবনে হতাশ হওয়া যাবে না! জীবনে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।’

ভাই আজ ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত! এটাই ছিল কাহার ভাইয়ের শেষ বিসিএস পরীক্ষা! এই পরিক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত ভাই যতটুকু খুশি হয়েছে তার ছোট ভাই, বড় ভাইয়েরা তার চাইতে বেশি খুশি হয়েছে! আমার আজকে ভাইয়ের জীবনের পরিশ্রম শেষে সফলতার দেখে কান্না চলে আসছে! একটা মানুষের কেমনে এত ধৈর্য থাকে!’

কাহারুজ্জামানসহ ৩৮তম বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের অভিনন্দন। সেবার অনন্য ভুবনে সবাইকে স্বাগত।