বেতনের টাকা তুলে পথকুকুরদের খাবার দিচ্ছেন স্কুলশিক্ষক

কুকুরদের খাওয়াচ্ছেন এক যুবক

করোনা ভাইরাসের দাপটে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। এই অসময়ে পথকুকুরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এক স্কুল শিক্ষক। ব্যাংক থেকে এক মাসের বেতন তুলে পথকুকুরদের জন্য বাজার করে নিয়মিত রান্না করছেন তিনি। ওই শিক্ষক হলেন কলকাতার মহেশতলা পুরসভার আক্রা কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুবোধ গায়েন। নিজেই বাজার করছেন। রান্নার লোক রেখেছেন। মুখে মাস্ক পরে এলাকার কুকুরদের খুঁজে বার করে সকাল-বিকেল খাওয়াচ্ছেন।

সুবোধবাবু একা নন। এই কাজে শামিল হয়েছেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত একদল যুবক-যুবতীও। এলাকার রাঁধুনিদের দিয়ে তাঁরা পথকুকুরদের জন্য রাঁধছেন ভাত, ডিম আর মুরগির মাংসের ছাঁট। রোজ দু’বেলা প্রায় ১০০ কুকুরের রান্না হচ্ছে। সৌম্য, সুমিত, শ্রেয়া, অভ্ররা সকালে সাইকেল ভ্যানে খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। কুকুরদের বার করে তাদের খাওয়াচ্ছেন। সৌম্য বলেন, ‘‘অনেকে রেশনের চাল তুললেও নিজেরা খান না। আমরা তাঁদের থেকে চাল-ডাল সংগ্রহ করছি। পাশাপাশি এলাকার দোকান থেকে মুরগির মাংসের ছাঁট কিনছি। রান্না করে ভাতের সঙ্গে মেখে দিচ্ছি। নিয়ে যাচ্ছি জলও। এলাকার মানুষও সাহায্য করছেন। কেউ ভ্যানের ভাড়া দিচ্ছেন, কেউ জলের দাম। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ওদের খাবারের রসদ মজুত আছে।’’

আর সুবোধবাবু জানাচ্ছেন, তিনি তাঁর বেতন থেকে ৪০ হাজার টাকা সারমেয়দের খাবারের জন্য আলাদা করে রেখেছেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, পথকুকুরদের খাবার থেকে চিকিৎসা— সবই করেন ওই শিক্ষক। লকডাউন শুরুর আগে গত ২২ মার্চ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনেছিলেন। তা দিয়েই চলছে তাঁর পথকুকুরদের যত্ন। খাদ্য তালিকায় মূলত থাকছে ভাত, ডিমের ঝোল। কখনও মাছ বা মাংস। এ ছাড়া সুবোধবাবুর ব্যাগে সব সময়ে থাকছে বিস্কুটের প্যাকেট। সকাল-বিকেল প্রায় ৪০-৫০টি কুকুরের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

স্থানীয়েরা জানালেন, মাস দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন সুবোধবাবুর স্ত্রী গীতাদেবী। ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘স্ত্রী ছিলেন সব কাজের সঙ্গী। তিনিই রান্না করতেন। এখন আমি হাল ধরেছি। সকলের কাছে অনুরোধ, পথকুকুরদের ছিটেফোঁটা হলেও কিছু অন্তত খেতে দিন। তাতে ওরা বেঁচে যাবে।’’