করোনার ভয়ে পালিয়েছে রাঁধুনি, বিপাকে কুয়েত-মৈত্রীর চিকিৎসকরা

রাজধানীর কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবস্থান করছিলেন এমন একটি আবাসিক হোটেল থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে রাঁধুনিসহ অনেক স্টাফ পালিয়ে গেছেন। ফলে, সেখানে অবস্থানরত ৫৬ জন চিকিৎসক খাবারের কষ্টে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালটি বাংলাদেশে করোনাভাইরাস চিকিৎসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বলে পরিচিত। সে কারণে এই হাসপাতালটিতে কর্মরত চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীদের নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়ি না গিয়ে ভিন্ন একটি জায়গায় অবস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার।

কিন্তু হাসপাতালে নিয়মিত দায়িত্বের পর ফিরে এসে খাবারের ব্যবস্থা না থাকাকে রীতিমত ‘অমানবিক’ এবং ‘হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন সেখানে অবস্থানরত একজন চিকিৎসক।

গোপনীয়তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ওই চিকিৎসক বলেন, ‘একে তো আমরা হাসপাতালে অনেক চাপের মধ্যে কাজ করি, তারওপর দিনের পর দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়না। এরপর হোটেলে ফিরে তিন বেলার সাধারণ খাবারটা যদি আপনি না পান, সেটা কতটা হতাশাজনক একটু ভাবেন! কেবল বিস্কুট আর পাউরুটি খেয়ে কত থাকা যায়?’

এরপর থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছাসেবী এক ক্যাটারিং সার্ভিসের সরবারহ করা খাবার খাচ্ছেন তারা। সর্বশেষ আজই অর্থাৎ বুধবার তাদের অন্য আরেকটি আবাসিক হোটেলে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।অবশ্য চিকিৎসকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেয়া হলেও, এখন ওই হোটেলে থাকছেন হাসপাতালের সেবাকর্মীরা।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অবস্থান করছিলেন যে হোটেলে সেই হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আসিফ বাবু বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় থেকে কেবল খাবার ব্যবস্থা নয়, কোন সুবিধাই দেয়া যাচ্ছিল না হোটেলের অতিথিদের।

তিনি বলেন, ‘হোটেলের শুধু রাঁধুনি নয়, আমার ৩৬জন স্টাফের সবাই পালিয়ে গেছে। বিশেষ করে ২৭ মার্চের পর থেকে আর একজন স্টাফও ছিল না, এমনকি টেলিফোন অপারেটরও না, কেবল আমি একাই আছি। যেহেতু ডাক্তাররা প্রতিদিন করোনাভাইরাসের রোগীই ডিল করে, আমার স্টাফরা সবাই ভয় পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ‘আশেপাশের লোকেরা তাদের আরো ভয় দেখিয়েছে। যে কারণে এরা বলতে গেলে এক রাতের মধ্যেই সবাই চলে যায়।’ নতুন করে হোটেলটিতে আবার কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’ তবে আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে আগের মত পুরোদমে হোটেলের সব সেবা চালু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া ওই চিকিৎসক বলেন, প্রায় তিনদিন খাবারের কষ্ট করার পর একদিন অনলাইনে তারা একটি পোস্ট দেখতে পান। ওই পোস্টে বলা হয়, চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী একটি দল ঢাকা শহরের মধ্যে অবস্থানরত যেকোনো চিকিৎসকের জন্যে সুলভ মূল্যে খাবার সরবারহের ব্যবস্থা করছেন।

এরপর অনলাইনেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী দলটির একজন সদস্য ডা. আয়েশা হোসেন সাদিয়া বলছিলেন, ডাক্তাররা যোগাযোগ করার পর থেকে তারা গত ২৭ মার্চ থেকে খাবার সরবারহ করছেন।

‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে সরকার অনেক কিছু করছে, কিন্তু সাধারণ নাগরিকদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ তবে, ঢাকার কিডনি ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া বলেছেন, কিছুদিন আগে একজন সহকর্মীর খাবারের কষ্ট দেখে প্রথম এই সার্ভিস চালুর কথা মাথায় আসে তার। অনেক ভাবনাচিন্তা করতে করতে শেষ পর্যন্ত এই ডাক্তারদের দিয়েই শুরু হয়েছে তাদের সার্ভিস।

দুপুর বা রাতের খাবারের জন্য তারা মাত্র ৮০ টাকা নেন। যদিও সাধারণ ছুটির মধ্যে খাবার তৈরি আর পরিবহন মিলে তাদের খরচ আরো বেশী হয়। তিনি জানিয়েছেন, কেবল কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক নন, এই মুহূর্তে ঢাকার আরো ১৫ টি হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। খবর: বিবিসি বাংলা।