পিটিআই ঢেলে সাজাতে অধিদপ্তরের ৩৮ নির্দেশনা

প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বা পিটিআইগুলোর। সেগুলোর ব্যাপারে নানা অভিযোগ আসার পর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পিটিআইগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনে ৩৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের নির্দেশনায় পিটিআইয়ের সিটিজেন চার্টার ডিজিটাল সাইনে দৃষ্টি নন্দন স্থানে লাগাতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের হোমপেইজের সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী পিটিআইয়ের সিটিজেন চার্টার বানাতে হবে। আর প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং পিটিআই ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মনিটরিং বোর্ড ডিজিটাল সাইনে হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। আর সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে পিটিআইয়ের বিভিন্ন ভবনের অবস্থান উল্লেখ করে অবকাঠামো নির্দেশক লাগাতে বলা হয়েছে পিটিআইগুলোকে। পিটিআইয়ের কর্ম পরিকল্পনা ডিজিটাল সাইনে তৈরি করে সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা, রুটিন অনুযায়ী প্রশিক্ষকদের ক্লাসে যাওয়া নিশ্চিত করতে এবং ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে পিটিআইগুলোকে।

প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯, গণকর্মচারী শৃংখলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ-২০২০ ও ছুটির বিধি বিধান সম্পর্কে জানতে বলা হয়েছে পিটিআইগুলোকে।

সব পিটিআইতে আইসিটি প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে-পরে ও বিরতির সময় প্রশিক্ষণার্থীদের আইসিটি ক্লাসে থাকতে হবে। যাতে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী ডিজিটাল কন্টেন্টে পাঠটিকা তৈরি করে শ্রেণিতে পাঠদান করতে পারে। চারু ও কারুকলা প্রশিক্ষককে হাতে কলমে প্রশিক্ষণার্থীদের শিক্ষা দিতে বলা হয়েছে, যাতে করিকুলামের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা দক্ষতা অর্জন করে নিজ বিদ্যালয়ে প্রয়ােগ করতে পারে।

শারীরিক শিক্ষার প্রশিক্ষককে সমাবেশ ও শরীর চর্চার সব কার্যক্রম প্রশিক্ষণার্থীদের দিয়ে পর্যায়ক্রমে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণার্থীরা বিদ্যালয়ে সমাদেশ এবং শরীরাচর্চার সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। আর পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য কাব ও স্কাউটের ওরিযেন্টেশন ও বেসিক প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়ােজন করতে বলা হয়েছে।

পিটিআইয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা়য় প্রয়োজন মাফিক এবং চুড়ান্ত পরীক্ষায় ২৫ শতাংশ বহিরাগত প্রত্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। আর সরকারি-বেসরকারি কলেজ শিক্ষকরা পিটিআইয়ের বহিরাগত প্রত্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাবেন।

পিটিআইয়ের প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা ফাইল ও মানসম্মত রেজিস্ট্রার রাখতে বলা হয়েছে। রেজিস্ট্রার খোলার সময় পৃষ্ঠা নম্বর দিয়ে স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে অফিস প্রধানকে প্রত্যয়ন দিতে বলা হয়েছে। পিটিআইয়ের সব দাপ্তরিক কাজ ই-নথির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে বলেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

কোন ধরনের পোস্টার বা ছাপানো কাগজ পিটিআইয়ের দেয়াল সাঁটানোয় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে পোস্টার বা কাগজ ফ্রেম করে সাঁটাতে বলা হয়েছে। বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণার্থীদের দিয়ে বই পর্যালোচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে বলা হয়েছে পিটিআইগুলোকে। প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীকে পুরষ্কৃত করতে হবে। পিটিআই ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং উপকরণ কর্নার তৈরি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া পিটিআইগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া পিটিআইয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে স্বল্পব্যয়ে জাতীয় প্রতিক-ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষগুলো ডিজিটাল সাইনের তৈরি উপকরণ দিয়ে সুসজ্জিত করতে বলা হয়েছে। প্রাচীরে হাদিস ও বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের শিক্ষণীয় বাণী লিখতে পিটিআইগুলোকে বলেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আর পিটিআইয়ে বছরে চারটি দেয়ালিকা উৎসব ও শিক্ষাবর্ষভিত্তিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। পিটিআইয়ের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করে বেসরকারি ফান্ডগুলো প্রতিবছর নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

পিটিআইতে ফুলের বাগান করতে বলা হয়েছে। সম্ভব হলে শাক-সবজির চাষ করতে হবে। আর পিটিআই ক্যাম্পাসে ফলজ, বনজ ও ঔষধী গাছ লাগাতে বলা হয়েছে। পিটিআইয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ ও তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। একই সাথে অডিটোরিয়াম ও গেস্টরুম সজ্জিত করতে বলা হয়েছে।

পুকুর বা দিঘি থাকলে তা পরিস্কার করে মাছ চাষ করতে বলা হয়েছে। প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণার্থী ও পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিতভাবে সপ্তাহে কমপক্ষে দুইদিন ভবন, ছাদসহ পিটিআই ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন করতে বলা হয়েছে।

পিটিআইয়ের জমি দখলে রাখতে নিয়মিত ব্যবহার করতে, প্রয়োজনে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। একইসাথে জমির হালনাগাদ রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। পিটিআইয়ের সব সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন শিফটভিত্তিক একজন প্রশিক্ষণার্থীকে ' ম্যানেজার অফ দ্যা ডে' নির্বাচন করতে বলা হয়েছে। সে সেদিনের সব কাজ পর্যবেক্ষণ করে সুপারের কাছে একটি লিখিত প্রতিবেদন দেবে।

এছাড়া পরিত্যক্ত স্থাপনাগুলো জরুরীভিত্তিতে নিলামের মাধ্যমে অপসারণ করতে বলা হয়েছে পিটিআইগুলোকে। আর পিটিআইয়ের ভবনগুলোতে ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে তা জরুর ভিত্তিতে সারাতে বলেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।