বঙ্গবন্ধু বাংলার গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল কালজয়ী দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের মহানায়ক বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার জন্ম না হলে আজকের এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ সম্ভব ছিলনা।যিনি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন।শৈশবকালে মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করেছেন।

যার কারনে শিশুদের জন্য অনুকরনীয় ও অনুসরনীয় হয়ে আছেন ইতিহাসের পাতায়।প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে তিনি অসহায় দুস্থ মানুষকে সাহায্য করার জন্য গ্রামের সার্মথ্যবান মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে চাল তুলতেন। গোপালগঞ্জে মিশন স্কুল পরিদর্শনকালে তৎকালীন মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আসলে কিশোর মুজিব তার পথ অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরে ছিলেন।যার কারনে শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক আন্দোলন সংগ্রামে শ্লোগানে শ্লোগানে উচ্চারিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। সত্যে ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারনে জীবনে চৌদ্দ বছর কারাভোগ করেন।শেখ মুজিবুর রহমান ছোট বেলা থেকেই রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন।গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে অধ্যায়নকালীন অবস্থায় তৎকালীন মুসলিমলীগ নেতাদের সাথে নিয়মিত পত্র বিমিময় চলতো।অল্প কয়েক দিনের মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক এর মতো বাঘা বাঘা নেতাদের সান্নিধ্যে লাভ করেন।মিশনারী স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলকাতা ইসলামি কলেজে অধ্যয়নকালীন শেখ মুজিব হয়ে উঠেন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ন্যায় সংগত আন্দোলনে একাগ্রতা পোষণ করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন যদিও মুচলেকা দিয়ে এ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করার সুযোগ ছিল কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি।

দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় যিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন।তাঁর প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় ছাত্রলীগ বাংলার মানুষের অধিকার ও মুক্তি সংগ্রামের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় রাজপথে নেমেছিলো উত্তাল ছাত্র জনতা।১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে অনুপ্রেরনার শক্তি ছিলেন শেখ মুজিব।তিনি নিজ জীবনের মায়া ত্যাগ করে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা উত্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে ছিলেন।এ দিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়।ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে ১৯৬৯ সালে আওয়ামীলীগের ৬ দফা এবং ছাত্র সমাজের ১১ দফা গণঅভ্যুত্থানে রুপ নেয়।পশ্চিম পাকিস্তানিরা মনে করেছিলেন মুজিবকে ধাবিয়ে রাখতে পারলেই বাঙালিকে পরাজিত করা যাবে।তাদের এই ধারনা ব্যর্থ প্রমানিত হয়।জনগণের আন্দোলনের মুখে পাক সরকার শেখ মুজিবুর রহমান কে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।

১৯৬৯ সালের ২৩ শে ফ্রেবুয়ারি জনগণের ভালোবাসায় তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন।বাঙালি জাতি অনুধাবন করতে পেরেছিল তাদের সংকট মুহুর্তে এমন এক মহান নেতার প্রয়োজন।বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন নিবার্চন ছাড়া সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব নয়।নানামুখী চাপের মুখ যখন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী নিবার্চন দিতে বাধ্য হয় তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ জয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনেন।ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহান শুরু করলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষাধিক লোকের সম্মুখে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।যে ভাষণটিকে আব্রাহাম লিংকনের গেটিস বার্গ ভাষণের সাথে তুলনা করা হয়েছে।এ ভাষণের মাধ্যমেই তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দেন এবং যার যা আছে তা নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার আহবান করেন।বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা বোনের লাঞ্চনার বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের বাংলাদেশ নামক একটি ভূখন্ড ।তিনি যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশ বিনির্মানে নানা মুখী পদক্ষেপ গ্রহন করেন।বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন একটি সুখী সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের।দূভাগ্যবশত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তা পূরণ হতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।আশার কথা হলো জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্ন আজ সমৃদ্ধির দ্বারপ্রান্তে।বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার আজ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোলমডেল।আসছে ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী।মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এ দেশের আপমর জনতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের আশা করেন।

লেখকঃযুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।