শেকৃবিতে বাড়ছে করোনা আতঙ্কে, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের দাবি

দেশে করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে না ছড়ালেও আতঙ্কিত সবাই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আতঙ্ক বাড়ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) এখনও কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া না গেলেও রোগ মোকাবিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোন প্রস্তুতি। বিদেশ ফেরত শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রকল্পের গবেষকরা কোয়ারেন্টাই ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজ করছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বন্ধের বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে আগামীকাল রবিবার সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আলোচনা সাপেক্ষে আগামীকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাঁদের ঘনবদ্ধ বসবাস করোনা ভাইরাসের মতো অতি মাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। আবার কিছু শিক্ষার্থী আক্রান্ত হবার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করলে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরিবারসহ আরও অনেকের মধ্যে, এমনকি তার পুরো এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি বেশ কিছু শিক্ষক দেশে ফেরত এসেছেন। এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থান করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দেশের গবেষকরা আসছেন, সেমিনার করছেন। ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ৩টি ও ছাত্রীদের জন্য ২টি আবাসিক হল রয়েছে। এসব হলে মোট ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩ হাজার, তবে এগুলোতে প্রায় ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর বাস। ফলে গণরুমগুলোতে অনেক শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় গাদাগাদি করে। তাদের শৌচাগারগুলোও বারোয়ারি। তাই একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দ্রুতই আরও অনেকের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা খুব বেশি।

আবাসিক হলের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব আলী বলেন, মধ্যে ইতিমধ্যে আমাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের ভয় দেখা দিয়েছে। আমাদের অভিভাবকরা আরও বেশি উদ্বিগ্ন। তারা বারবার বাড়ি চলে আসতে বলছেন। এদিকে হলের বাইরে থেকে যারা ক্লাস করে তাদের প্রতিদিন পাবলিক বাসে যাতায়াত করতে হয়। ফলে তাদের ঝুঁকি আরো বেশি।

বর্তমান কাঠামোতে কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে প্রথমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে অথবা পার্শ্ববর্তী শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুস্থ শিক্ষার্থীর সঙ্গে হল কর্তৃপক্ষের কেউ এবং তাঁর রুমমেট বা বন্ধুরা যান। কিন্তু এই করোনার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে যাঁরা যাবেন, তাঁদেরও এই রোগের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতি কী হবে সে বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় ফেসবুক গ্রুপ ‘সাউ ফ্যামিলি’তে চলমান অনলাইন জরিপে জানা যায়, ৯৪ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ চায়। ঐ জরিপে দুই ঘন্টায় ৮৬২ জন শিক্ষর্থী অংশগ্রহণ করেন।

শেকৃবির চীফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. খন্দকার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে প্রশাসনের ভেবে দেখা উচিৎ।