‘বাচ্চাদের মেরে ফেললাম, আমার লাশ রেললাইনে পাওয়া যাবে’

নিহত দুই শিশুসহ বাবা রাকিবউদ্দিন ভূঁইয়া
নিহত দুই শিশুসহ নিখোঁজ বাবা রাকিবউদ্দিন ভূঁইয়া

রাজধানীর দক্ষিণখানের ফ্ল্যাট থেকে মা ও দুই শিশুসন্তানের লাশ উদ্ধারের পর চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ওই ঘটনার পর দুই শিশুর বাবা রাকিবউদ্দিন ভূঁইয়া নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে এক জায়গায় লেখা, ‘বাচ্চাদের মেরে ফেললাম, আমার লাশ রেললাইনে পাওয়া যাবে।’

শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণখানের প্রেমবাগান রোডের একটি বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে গত দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। সে রাতেই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে মা মুন্নী রহমান (৩৭) এবং তাঁর দুই সন্তান ফারহান উদ্দিন (১০) ও লাইবা ভূঁইয়ার (৩) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মা ও মেয়ের লাশ খাটের ওপর আর ছেলের লাশ কক্ষের মেঝেতে পড়ে ছিল। সেখান থেকে আলামত হিসেবে একটি হাতুড়ি ও ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের ধারণা, ডায়েরির হাতের লেখা বাবা রাকিবউদ্দিনের হতে পারে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) উত্তরা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী। তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায়। পুলিশ বলেছে, হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মুন্নীকে, আর দুই শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে মায়ের সঙ্গে অবুঝ দুই শিশুকে কেন হত্যা করা হলো, এর জবাব খুঁজে পাচ্ছে না স্বজন ও প্রতিবেশীরা। দক্ষিণখানের সর্বত্রই দুই শিশুসহ মাকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গতকাল মানুষের মুখে মুখে ছিল।

মুন্নীর পৈতৃক বাড়ি রাজধানীর মহাখালীতে। তাঁর মা–বাবা বেঁচে নেই। মুন্নীরা তিন বোন। এক বোন দেশের বাইরে থাকেন। আরেকজন পরিবার নিয়ে বনানী থাকেন। তাঁর একমাত্র ভাই মুন্না রহমান মহাখালীতে নিজের বাড়িতে থাকেন।

নিহত মুন্নীর মামাতো ভাই ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ দক্ষিণখানেই থাকেন। গতকাল দুপুরে তিনিসহ কয়েকজন স্বজন যে বাসায় মুন্নী থাকতেন, সে বাসার অন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘সংসার করতে না চাইলে মুন্নীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারতেন রাকিব। ওদের কেন খুন করল।’ তিনি বলেন, রাকিব আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ করেছিলেন। সেই টাকা তিনি পরিশোধ করতে পারছিলেন না।

মুন্নীদের প্রতিবেশী নাহিদ চৌধুরী বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাকিবের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। তখন তাঁকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। এরপর তাঁকে এলাকায় আর দেখা যায়নি। দক্ষিণখানের প্রেমবাগানের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রাকিব অনলাইনে জুয়া খেলতেন বলে তাঁরা শুনেছেন।

শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালে ফরেনসিক রিপোর্ট পেশ করেন হাসপাতালের চিকিৎসক। রিপোর্ট অনুযায়ী, মুন্নী রহমানের মাথায় হাতুড়ির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া মেয়েকে গলা টিপে এবং ছেলেকে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে তিনজনের লাশ নিয়ে যান স্বজনেরা। পরে রাতে বনানী কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ডায়েরির লেখাটি রাকিবউদ্দিনের বলে মনে হচ্ছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ওই একটি লাইন ছাড়া খুনের বিষয়ে আর কিছু লেখা ছিল কি না, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।