লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা

সংগৃহীত

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৪-এর আওতায় ২০২৩ সালের মধ্যে বেশকিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। যদিও সে লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা। শিখন ফল অর্জনের ২০২৩ সালের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রবণতাকে নিম্নগামী উল্লেখ করা হয়েছে খোদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রকাশিত অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস প্রতিবেদনে। সেখানে ন্যূনতম দক্ষতা বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম দক্ষতা অর্জনের হারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বাংলায় ৬০ শতাংশ ও গণিতে ৫০ শতাংশ। যদিও গত কয়েক বছরের অগ্রগতি বিবেচনায় নিলে অর্জনের হার নিম্নগামী।

পঞ্চম শ্রেণী শেষ করেও বাংলা ও গণিতে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী। প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাঠদান করাচ্ছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষের সংকটও তীব্র বেশকিছু বিদ্যালয়ে। সর্বোপরি পর্যবেক্ষণ ও পরিকল্পিত বিনিয়োগের অভাবে নিশ্চিত হচ্ছে না মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা।

প্রতিবেদনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিষয়ে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। যদিও ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ হার ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশে রয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ প্রধান শিক্ষকদের লিডারশিপ প্রশিক্ষণ থাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এখনো ১৫ শতাংশ শিক্ষক এ প্রশিক্ষণের বাইরে রয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী, দেশের ৭৯টি বিদ্যালয়েই মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। দুজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে ৭২১ বিদ্যালয়ে। আর তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে ৭ হাজার ৭৬৪ বিদ্যালয়ে। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই ৮ হাজার ৫৬৪টি বিদ্যালয়ে তীব্র শিক্ষক সংকট রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি বিদ্যালয়ে কমপক্ষে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকট শিক্ষক সংকটের মধ্যে রয়েছে এ বিদ্যালয়গুলো।

এ বিষয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ করলে হবে না, সেটি অর্জনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গৃহীত লক্ষ্যগুলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রারও পরিপূরক। দেশের জন্যসংখ্যাকে দক্ষ করে তোলার ভিত্তিমূল প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার এ স্তর পরবর্তী সব স্তরের ভিত্তি সৃষ্টি করে। তাই প্রাথমিকে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, আসলে ভালো শিক্ষক না থাকায় মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে না। তাই আমাদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। শ্রেণীভিত্তিক পাঠদানের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণেও জোর দিতে হবে। পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নও বেশি জরুরি। কেননা এখনো খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করার মতো খবর শোনা যায়। এজন্য সরকারকে বিনিয়োগও বাড়াতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার মান যাচাইয়ে প্রতি দুই বছর অন্তর ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট (এনএসএ) জরিপ চালায় সরকার। এ জরিপের আওতায় শিক্ষার্থীদের বাংলা ও গণিত বিষয়ে ন্যূনতম দক্ষতা যাচাই করা হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ে ন্যূনতম দক্ষতা (ব্যান্ড ৫) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬০ শতাংশ। ২০১৫ সালে এ হার ছিল ২৩ শতাংশ। ২০১৭ সালে এসে এ হার কমে ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে ২০২৩ সালের মধ্যে গণিতে ন্যূনতম দক্ষতা (ব্যান্ড ৫) অর্জনকারী শিক্ষার্থীর হারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫০ শতাংশ। ২০১৫ সালে এ হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। ২০১৭ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন বলেন, গত এক দশকে প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের বেশকিছু অর্জন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর হার যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার প্রায় শতভাগ। মিড ডে মিল কার্যক্রম সব মহলেই প্রশংসিত হয়েছে। এখন আমরা জোর দিচ্ছি শিক্ষার মানে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম, পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি—এ ধরনের গুণগত বিষয়গুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার মানে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আমরা আশাবাদী।