নারী ও শিশু নির্যাতন আইন সংস্কারের আহবান ঢাবি শিক্ষক সমিতির

নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে যে আইন বাংলাদেশে প্রচলিত আছে তার ও সংস্কার করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়ে দিয়েছে তারা কীভাবে পড়ালেখা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কাজ, যে কোন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে হয়। যে অপরাধী এ ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

তিনি বলেন, দেশে এবং দেশের বাইরে যারা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেকোন ধরণের সহযোগিতা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকবে।’

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মকসুদ কামাল বলেন, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন ঘটনা প্রমাণ করে, দেশের প্রশাসন কতটুকু দায়িত্বজ্ঞানহীন। দেশের একটি সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী যে জায়গায় নিরাপদ নয়, সে জায়গায় মফস্বল এলাকার মেয়েরা কোন অবস্থায় আছে, তা প্রমাণিত হয়।’

তিনি বলেন, ধর্ষক আর রাজাকারের কোন পার্থক্য নেই। যদি রাজাকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে ফাঁসি হয়, তাহলে ধর্ষকেরও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।’ এসময় নারী ও শিশু নির্যাতনের যে আইন বাংলাদেশে প্রচলিত আছে, তার ও সংস্কার করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘সুস্থ, সুন্দর, সামাজিক পরিবেশ ঘটনার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। মুজিববর্ষে আমাদের শপথ হোক দেশ হবে ধর্ষকমুক্ত। দেশকে ধর্ষকমুক্ত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।’ সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আহবান জানান তিনি।

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের চেয়ারপারসন ড. সানজিদা আক্তার, যুগ্ম সম্পাদক জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিনাত হুদা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শরীফ উল্লাহ ভুইয়া, গনিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্র নাথ পোদ্দার, কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদ, সহকারী প্রক্টর আব্দুর রহিম প্রমুখ।

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। নারী, পুরুষ, অভিভাবকসহ সকলের জন্য কাউন্সিলিং করা প্রয়োজন। এই কাউন্সিলিং গঠন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকারকে আরো দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে।’

রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের প্রতি যে মনোভাব, তার পরিবর্তন করা দরকার।’ এসময় কুর্মিটোলার মতো একটি ভিআইপি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটায় পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য সমলোচনা করেন তিনি।

কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, ‘এ অবস্থায় ভিকটিমের সাহসিকতা, দৃঢ়তা আমাদেরকে নতুনভাবে পথ চলতে সহায়তা করে। তিনি আমাদের কাছে প্রেরণা।’