বিশ্বে যেভাবে শুরু বাণিজ্য মেলা

©

পণ্যের প্রচার, বাজারজাত ও ব্যবসা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বাণিজ্য মেলা। মধ্যযুগে ইউরোপে বাণিজ্য মেলার শুরু হলেও শিল্পবিপ্লবের সময় থেকে বিশ্বজুড়ে এ ধারণা পরিচিত হতে শুরু করে এবং বিশ শতকে তা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। বাণিজ্য মেলা নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ শরীফ হোসেন

বাণিজ্য মেলা কী: বাণিজ্য মেলা বা প্রদর্শনী হচ্ছে শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট স্থানে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করা। এর পাশাপাশি ওয়ার্কশপ, উপস্থাপনা, খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের মতবিনিময়, পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদর্শনীকালে অনুষ্ঠিত হয়। পণ্যের বাজারজাত ও ব্যবসা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ মেলা। আন্তর্জাতিক বড় প্রদর্শনীগুলো সাধারণত বড় শহরগুলোর বড় কোনো কনভেনশন সেন্টার বা ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ের প্রদর্শনী কোনো হোটেল বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ১০ হাজারের বেশি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদর্শনীর ভিন্নতা: বাণিজ্য প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য থাকে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের একত্র করা। সে ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রদর্শনীতে সাধারণত খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেমন প্রতিবছর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত বুক এক্সপো আমেরিকাতে শুধু প্রকাশনাশিল্পের পেশাদারদের আসার অনুমতি দেওয়া হয়। একইভাবে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস শোতে দর্শনার্থীর সংখ্যা শুধু ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাতের পেশাজীবীদের মধ্যে সীমিত রাখার চেষ্টা করা হয়। অস্টিনে অনুষ্ঠিত সাউথ বাই সাউথ ওয়েস্ট এবং আমেরিকার সবচেয়ে বড় আরভি শোতে পেশাজীবীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আসার সুযোগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ফ্রাংকফুর্ট বুক ফেয়ারে প্রথম তিন দিন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে থাকলেও শেষ দুই দিন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

যেভাবে এলো বাণিজ্য মেলা: মধ্যযুগে ইউরোপে মার্চেন্ট ক্যাপিটালিজমের যুগে পণ্যের প্রচারের উদ্দেশ্যে একধরনের বাণিজ্য প্রদর্শনী হতো। সেই ঐতিহ্যকে ধারণ করেই চলছে বর্তমান সময়ের বাণিজ্য মেলা। ওই সময় পণ্যের উত্পাদনকারীরা তাদের পণ্য নিয়ে বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়াত মেলায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে। ওই সব মেলায় তারা পণ্যের প্রদর্শনী করত ও বিক্রি করত। আঠারো শতকের শেষ দিকে শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপ ও আমেরিকায় বাণিজ্য প্রদর্শনী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে শুরু করে। উনিশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে বার্ষিক বাণিজ্য প্রদর্শনী একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়ায়। বিশ শতকে এসে বড় কম্পানিগুলো বাণিজ্য প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে কনভেনশন সেন্টার বা স্থায়ী ভেন্যু গড়ে তোলে। একুশ শতকে দ্রুত শিল্পায়নের ফলে এশিয়া মহাদেশে সাধারণ চিত্র হয়ে ওঠে বাণিজ্য প্রদর্শনী।

মেলায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য: বাণিজ্য মেলায় কম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করে তাদের পণ্যের প্রচারণা, নতুন ক্রেতা তৈরি, ডিলার ও পরিবেশকদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন, বাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে জানা ও জরিপ করা এবং খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি ও তথ্যবিনিময়ের উদ্দেশ্যে। এসব প্রদর্শনীতে অংশগ্রণ করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের কমবেশি অর্থ খরচ হলেও তা তাদের ব্যবসার প্রচারণায় একটি বিনিয়োগ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। মেলায় দর্শনার্থীরা আসে সাধারণত একটি খাতের নতুন পণ্য ও উদ্ভাবন সম্পর্কে জানতে এবং বিশেষ ছাড়ের সুবিধা নিতে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা: পণ্য ও সেবা প্রদর্শনীর একটি আন্তর্জাতিক মানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ১৯৯৫ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) শুরু হয়। এতে দেশি কম্পানিগুলোর পাশাপাশি বিদেশি কম্পানিগুলোও তাদের পণ্য প্রদর্শন করে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ইপিবি এই মেলার আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্থায়ী কার্যালয় তৈরি করা হচ্ছে ঢাকার পূর্বাচলে। এ বছর বসছে মেলার ২৫তম আসর। জানুয়ারি মাসজুড়ে এ মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় প্রবেশ টিকিটের মূল্য ৪০ টাকা।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর শেরেবাংলানগরে। গত বছরের মেলায় ২২টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। অংশ নেওয়া দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। ২০১৯ সালে মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল, সাধারণ স্টল, খাবারের দোকানসহ মোট ৬০৫টি স্টল ছিল, যার ৩৫টি বিদেশি। (সূত্র: কালেরকন্ঠ)