ঢাবি ছাত্রের আত্মহত্যা চেষ্টার নেপথ্যে অধিভুক্তি বাতিল!

আরমান শাহরিয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন ফজলুল হক মুসলিম হলে। গত বুধবার রাত ১২টার দিকে রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও ভাগ্যগুণে বেচেঁ যান তিনি।

তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্যে তার খাতায় সেটি লিখেন। তবে স্ট্যাটাস দেওয়ার আগেই তিনি হাত কেটে বসেন। পরে তাকে ২০৯ নম্বর রুম থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নেওয়ার পর, তার রুমে খাতায় একটি নোট দেখতে পায় বন্ধুরা।

নোটটি পড়ে দেখা যায়, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক ডা. মোহাম্মদ আবদুজ জাহেরকে নিয়ে লেখা। যেখানে আত্মহত্যা চেষ্টাকারী আরমান লিখেছেন, তার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুজ জাহের।

তবে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে অন্য কথা। জানা গেছে, বিভাগের শিক্ষার্থীরা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে ঘটনার দিন বিভাগের নবীন বরণ অনুষ্ঠান থাকায় বিভাগের শিক্ষকরা তাদের আন্দোলন না করতে অনুরোধ করেন।

এ নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়নি। ফলে তাদের বকাঝকা করে চলে যেতে বলেন শিক্ষকরা। পরে রাতে আরমানের আত্মহত্যার চেষ্টার খবর পাওয়া যায়। যদিও আরমান তার সুইসাইড নোটে ওই শিক্ষক অপমান করেছে বলে দাবি করেছেন।

পড়ুন: ক্লাসে অপমান, রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা ঢাবি ছাত্রের

সুইসাইড নোটে আরমান লিখেছেন, ডা. মোহাম্মদ আবদুজ জাহের জুনিয়রদের ক্লাসে দিয়ে তার কথা বদনাম করেন। তাকে বলে সে নাকি গাঁজা, ইয়াবা, হিরোইন খায়। এমনকি তার রিলেশনশিপ নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে। যার কারণে ব্যথীত হয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

নোটটি যে আরমান তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য লিখেছেন তা নিশ্চিত করেছেন আরমান নিজেই। এ ব্যাপারে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য নোটটি লিখেছিলাম। তবে লেখার পর আমার কী যে হয়ে গেল আমি নিজেই জানি না।’ ওই শিক্ষক দুর্ব্যবহার করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. মোহাম্মদ আবদুজ জাহের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ওই ছাত্র চতুর্থবর্ষে পড়লেও দ্বিতীয় বর্ষের ইমপ্রুভমেন্ট দিয়েছে। চারমাস আগে একবার তাকে আমি বলেছিলাম, ভালোভাবে পড়াশোনা করতে, নাহলে পিছিয়ে পড়বে। এরপর আর কোন যোগাযোগ হয়নি। তার কোন কোর্সের শিক্ষকও নই আমি।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার আগে আমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানের সময় ঠিক হয়, প্রোভিসি স্যার ছিলেন প্রধান অতিথি। তবে তারা ইনস্টিটিউটের গেটে তালা লাগিয়ে গার্হস্থ্য অর্থনীতির অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিল। তখন আমরা তাদের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নেই।’

ডা. মোহাম্মদ আবদুজ জাহের বলেন, ‘চারজন ছাত্র আমাদের সঙ্গে কথা বলে। এরমধ্যে তিনজন আন্দোলন বন্ধ করতে রাজি হয়। তবে ওই ছেলে রজি হয়নি, ফলে বাকি ছাত্ররাও আর কথা বলেনি। তখন আমরা তাদেরকে বলি, ঠিক আছে তোমরা এখান থেকে চলে যাও। পরে রাতে শুনি, সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে।’

আরমানের সুইসাইড নোট