একটি রিইউনিয়ন, আবেগ এবং আয়োজনের পেছনের গল্প
- ৩০ নভেম্বর -০০০১, ০০:০০
ইংরেজি রিইউনিয়ন শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ পুনর্মিলন। একটু বিস্তারিত করে বললে অনেকদিন পর পুরোনো বন্ধু, সহকর্মীদের একস্থানে মিলিত হওয়া। রিইউনিয়ন সাধারণত হয়ে থাকে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির বন্ধু কিংবা যেকোন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন কলিগদের মাঝে। মূলত পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করতেই রিইউনিয়নের আয়োজন করা হয়।
এবছর ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিন হয়ে গেল খুলনা জিলা স্কুলের এসএসসি ২০১৪ ব্যাচের রিইউনিয়ন। উক্ত ব্যাচের ছাত্র হিসেবে আমিও অংশ নিয়েছিলাম আয়োজিত রিইউনিয়নটিতে এবং খুলনায় থাকার সুবাদে আয়োজক কমিটিতে কাজ করার সুযোগ ও হয়েছিল।
আমাদের স্কুল থেকে বের হবার প্রায় পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। একইবছরে আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছি বিভিন্ন স্থানে। নানা ব্যস্ততার কারণে এখন আর আগের মত সবার মধ্যে যোগাযোগটা সেভাবে ছিলনা। রিইউনিয়ন আয়োজন করতে যেয়ে আমাদের প্রথম যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে সেটা হল সবাইকে জানানো আমাদের উদ্যোগের কথা। বলে রাখা ভালো, আমাদের ব্যাচে মোট ছাত্রসংখ্যা ছিল ৪৩৫। এই বৃহৎ সংখ্যার সাথে যোগাযোগ করার কাজটা ছিল খুবই প্যারাদায়ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্ষেত্রে যদিও অনেক সাহায্য করেছে তারপরও যারা যোগাযোগের কাজটা করেছে তারা ধন্যবাদ পাবার দাবীদার।
এছাড়াও রেজিষ্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করাটাও ছিল অনেক কঠিন একটা কাজ৷ রেজিষ্ট্রেশন ফি নির্ধারণের সময় যেই বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেটি হল চাদার পরিমাণ যেন কারো সামর্থ্যের বাইরে না যায়। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই এখনো কোন উপার্জনের সাথে জড়িত নয় তাই এই বিষয়টির দিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে হয়েছিল। আমরা আমাদের রিইউনিয়নে রেজিষ্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করেছিলাম ৬০০ টাকা। তবে বর্তমান বাজারমূল্যে এই টাকায় অনুষ্ঠান নামাতে ব্যাপক কাঠখড় পোহাতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে আয়োজক কমিটি দারুণ সফল বলে আমি মনে করি।
আমাদের আয়োজনের কাজটাকে সবচেয়ে সহজ করেছে সবার আন্তরিকতা। স্কুলের প্রতি সবারই আলাদা একটা বিশেষ আকর্ষণ থাকে। যেই স্কুলে যাদের সাথে আমরা দীর্ঘ সাতটা বছর অতিবাহিত করেছি, কাটিয়েছি নিজেদের শৈশব ও কৈশোর সেই মানুষদের সাথে সেখানে আবার একত্রিত হওয়ার রোমাঞ্চ সবাইকে ছুয়ে গেছিল।
তাইতো রিইউনিয়নে অনেকেই এসেছিল যাদের বর্তমানে খুলনার সাথে কোন সম্পর্কই নেই। এই যেমন সোহান ; বাবার চাকরির সুবাদে খুলনা জিলা স্কুলের ছাত্র হওয়া এরপর আবার নিজ জেলা কুষ্টিয়াতে ফিরে যাওয়া। শুধু মাত্র পুরনো বন্ধুদের সাথে একটা দিন অতিবাহিত করবে বলেই সে ছুটে এসেছিল খুলনাতে। অপরদিকে মারুফকে কিঞ্চিৎ হতভাগাই বলা চলে, রেজিষ্ট্রেশন করার পরেও বাড়ি থেকে অনুমতি না পাওয়ায় তার আর আসা হয়ে ওঠেনি। অনেকেরই আবার ছিল ভার্সিটি খুলেই পরীক্ষা। তবুও পুরোনো স্মৃতিকে রোমন্থন করার জন্য সবাই এসেছিল স্কুল মাঠে। তবে দেশের বাইরে থাকা, ছুটি না পাওয়া এবং পারিবারিক কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে আসতে পারেনি।
অনুষ্ঠানের ইভেন্ট নির্বাচনে আমরা গুরুত্ব দিয়েছিলাম স্কুলজীবনের স্মৃতিবিজড়িত দৈনন্দিন কাজগুলোকে। আমাদের রিইউনিয়নের উদ্বোধনের পরেই ছিল ঘন্টা বাজিয়ে এসেম্বলি শুরু করা যা নিঃসন্দেহে সবাইকে করেছিল নস্টালজিক । সারাদিন ধরে খেলাধূলা, সেলফি, গ্রুপ ফটোসেশন ও দুরন্তপনাতো ছিলই। স্কুল প্রাঙ্গনে আমরা কালার ফেস্টেরও আয়োজন করি। সবাইকে আবির মাখিয়ে আমাদের বন্ধনকে আরো রঙিন করাই ছিল এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। এছাড়া ব্যাচের ছাত্রদের এবং খুলনার স্বনামধন্য ব্যান্ডদের অংশগ্রহণে বিকালে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বন্ধুত্ব নয় ভ্রাতৃত্ব এই চেতনাকে ধারণ করে আমরা আয়োজন করি আমাদের রিইউনিয়ন। সবার আগ্রহ ও আন্তরিকতা ছিল বলেই আমরা সফলভাবে আমাদের ব্যাচের প্রথম রিইউনিয়ন আয়োজন করতে সক্ষম হই। বিশেষ করে সুজন, আসিফ, নোমান, রাদ, রিয়াদসহ আরো অনেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে এই রিইউনিয়ন আয়োজনে।