ভুল চিকিৎসা: ১০ দিনেও জ্ঞান ফেরেনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মুন্নির

ভুল ইনজেকশন পুশ করার পর আজ ১০ম দিনেও জ্ঞান ফেরেনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মরিয়ম সুলতানা মুন্নি। তার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দিনদিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

ভুক্তভোগী মুন্নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে গোপালগঞ্জ সদরের চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের মোশারফ বিশ্বাসের মেয়ে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মুন্নি পিত্তথলিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আব্দুল মতিনের তত্ত্বাবধানে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তপন মন্ডলের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মুন্নি। গত ২০ মে সোমবার রাতে হঠাৎ হাসপাতালে মুন্নির পোস্ট অ্যানেস্থেটিক এক্টিভিটি সম্পন্ন করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তার অপারেশন করার কথা ছিল।

সে অনুযায়ী হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ মঙ্গলবার সকালে রোগীর ফাইল না দেখে গ্যাসট্রাইটিসের ইনজেকশন সারজেলের পরিবর্তে অ্যানেস্থেসিয়ার (অজ্ঞান করার) ইনজেকশন সারভেক ওই রোগীর শরীরে পুশ করেন। এই ইনজেকশন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মুন্নি। তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাকে খুলনা শেখ আবু নাসের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

পরে শেখ আবু নাসের হাসপাতালে মুন্নির শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক মুন্নিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। সে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১০ দিন ধরে অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছেন মুন্নি।

এই ঘটনায় মুন্নির পরিবারের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামী ডা. তপন ও নার্স শাহানাজসহ ৩ আসামিকে ১০ম দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ওই মামলার প্রধান আসামী ডা. তপনসহ সবাই প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

গোপালগঞ্জ আড়াইশ বেড হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. চৌধুরী ফরিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রী মুন্নির জ্ঞান যেহেতু ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসেনি সেক্ষেত্রে তার জ্ঞান আর ফিরে আসবে বলেও মনে হচ্ছে না। তবে জ্ঞান ফিরলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে মুন্নি। এমন সংশয় বোধ করছেন সবাই।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের পর পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির সদস্যরা গত ২৬ মে রবিবার তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তাতে হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহানাজ বেগম ও কুহেলীকার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মুন্নিকে ভুল ইনজেকশন পুশের সত্যতা পাওয়া গেলেও ডা. তপনের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা প্রদানের কোন তথ্য মেলেনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুন্নির ভুল চিকিৎসার প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ চার দফা দাবি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।