দাঁড়িপাল্লা-হাতপাখা তিক্ততা সামনে এনে স্ট্যাটাস দিলেন মুফতি মিসবাহ

লেখক ও ইসলামি বক্তা হাবিবুর রহমান মিসবাহ
লেখক ও ইসলামি বক্তা হাবিবুর রহমান মিসবাহ © টিডিসি সম্পাদিত

লেখক ও ইসলামি বক্তা মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ বলেছেন, ‘আশা করেছিলাম সমঝোতা নিয়ে জামায়াতের আন্ডারগ্রাউন্ড পলিসি সামনে আসবে না বা আসার প্রয়োজন পড়বে না। মনোনয়নের শেষ দিনও শেষ, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসার পেছনে জামায়াতের হঠকারিতাই দায়ী। এ নিয়ে আমার একটা লেখা অনলি মি করা আছে, প্রত্যাশা ছিল সেটা পাবলিক করতে হবে না, কিন্তু দু’দিন না যেতেই বাস্তবতা সামনে চলে এলো।’

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এসব কথা লিখেছেন হাবিবুর রহমান মিসবাহ। এতে জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা ও ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার মধ্যে তিক্ততার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। 

হাবিবুর রহমান মিসবাহ লিখেছেন, ‘জামায়াত এখনও ততটা উদার হতে পারেনি অথবা আমিরে জামায়াত চাইলেও হয়তো নেতাকর্মীদের চাপে উদার হতে পারছেন না। আমিরের আনুগত্য বিশাল এক নেয়ামত, যা সবাই গ্রহণ করতে পারে না। জামায়াত মনে করছে সারাদেশে তাদের জয়জয়কার! মূলত সেটা দলের নয়, ইসলামের। যে ব্যক্তি কখনও ইসলামী দলে ভোট দেয়নি, সেও সমঝোতার কারণে ইসলামের পক্ষে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘কাউকে যদি দাড়িপাল্লায় ভোট দিতে বলেন তিনি না করে দেবেন, হাত পাখার ক্ষেত্রেও বলবে চিন্তাভাবনা করে দেখি। ঐ ব্যক্তিটাই যখন দেখলো ইসলামপন্থী সবাই একসঙ্গে আছে, তখন সেও বলে, আমার ভোট এবার ইসলামের পক্ষে হবে! জয়জয়কারটা মূলত এখানেই। এককভাবে জামায়াতের কোনো অস্তিত্ব নেই এদেশে। এটা হয়তো বুঝে উঠতে পারছে না তারা।’

সাধারণ মানুষের মাঝে জামায়াত নিয়ে আগ্রহ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘কলেজ-ভার্সিটির ইসলামপন্থী শিক্ষার্থীদের মাঝে জামায়াতের সাপোর্ট বেশি নিঃসন্দেহে। সেটার ওপর ভিত্তি করে আমজনতার প্রেডিকশন করতে গেলে ধরা খেতে হবে। সাধারণ মানুষের মাঝে জামায়াতের একাত্তরবিরোধী ন্যারেটিভ এখনও আগের মতোই আছে। অন্যদিকে আকীদার ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তথা দেওবন্দী ধারার সকল আলেম জামায়াতবিরোধী। গণমানুষ এ ব্যাপারগুলো হিসেবে রেখেই জামায়াত সম্পর্কে রায় প্রদান করে।’ 

হাবিবুর রহমান মিসবাহ’র ভাষ্য, ‘গণজনতার যুগ-যুগান্তরের লালিত স্বপ্ন— ইসলামপন্থী সবাই এক হয়ে আসুক! রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলাম যাক! তারাও জানে, রাষ্ট্রক্ষমতায় ইসলামপন্থীরা বসতে পারলে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হবে। যখন দেখলো পীর সাহেব চরমোনাই ও ইবনে শায়খুল হাদীস-সহ কওমী ধারার আলেমদের বৃহত্তর অংশ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েছে, তখন সাধারণ মানুষও জামায়াতের ঐতিহাসিক ভুল সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠায়নি।’

এটাকে জামায়াত তাদের জনপ্রিয়তা হিসেবে কাউন্ট করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিপত্তিটাও বেধেছে এখানেই। তারা মনে করেছে, কাউকে ছাড়াই ২০০ প্লাস আসন জিতে এককভাবে ক্ষমতায় চলে যাবে! পীর সাহেব চরমোনাই হাফিজাহুল্লাহ গণমানুষের স্বপ্ন পূরণে এক বাক্স নীতি সামনে নিয়ে আসেন। সকল সমালোচনা আকিদা ও বৈরিতা যার যার জায়গায় রেখে শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক সমঝোতার রুপরেখা তৈরি করেন। ইসলামপন্থী ভোট একবাক্সে রাখতে ইসলাম দেশ ও মানবতা রক্ষায় ইসলামী দলগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘোরেন এই জনদরদী নেতা।’

আরও পড়ুন: খালেদা খানম থেকে খালেদা জিয়া

তিনি বলেন, ‘জোট বা ঐক্যমতে সবচে সমস্যা যেটা, সেটারও নিরসন করলেন পীর সাহেব চরমোনাই! অর্থাত এই সমঝোতায় কোনো একক লিডার থাকবেন না। ছোট-বড় সবাই সমান। কে কত আসন পাবেন, সেটা নিয়েও কথা থাকবে না বরং যে আসনে যাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও জনপ্রিয়তা বেশি, সেই আসনে সেই দলের প্রার্থী হবেন। জামায়াত যখন সেই নীতি থেকে বেরিয়ে ২০০ আসনের চাহিদা পেশ করে এবং সেটাকে শরিয়াহর বিধানের মতো জপতে শুরু করে তখন আরও বড়ভাবে বিপত্তি ঘটে।’

‘তাদের হঠকারিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছোয়— সমঝোতার বাকি সাত দলকে কোনো ধরনের নক দেওয়া ছাড়াই নতুন দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে! আসন চূড়ান্তের বৈঠক নিয়ে নানাভাবে অসত্য তথ্যে দিকভ্রান্ত রাখে সবাইকে! সারাদেশে ইসলামের জয়জয়কার দেখে সেটাকে নিজেদের জনপ্রিয়তা ভেবে অতি আত্মতুষ্টিতে ভোগতে শুরু করে তারা।’ 

ইসলামি বক্তা হাবিবুর রহমান মিসবাহ বলেন, ‘এই সমঝোতা শেষ পর্যন্ত যদি আলোর মুখ না দেখে, তখন তারা বুঝতে পারবে ঐতিহাসিক ভুলগুলোর সাথে আরেকটা ঐতিহাসিক ভুল কীভাবে যুক্ত হলো, যার জন্য আজীবন পস্তাতে হবে জামায়াতকে। জনগণ স্থায়ীভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদের থেকে।’