শেকৃবিতে সিন্ডিকেট সভা ঘিরে উত্তেজনা

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) পূর্বঘোষিত সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সভা শুরুর একপর্যায়ে  শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেট সভা স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে প্রতিবাদ করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বন্ধ ক্যাম্পাসে এই সিন্ডিকেট সন্দেহের সৃষ্টি করে এবং নিজস্ব জনবল ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের স্বজনদের নিয়োগ দিতেই এই সিন্ডিকেটের আয়োজন করা হয়েছে। তারা আরও বলেন, ইতিপূর্বে কর্মচারী নিয়োগে এই প্রশাসন কোনরকম ভেরিফিকেশন ছাড়াই আওয়ামী সংশ্লিষ্ট জনবল নিয়োগ দিয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সিন্ডিকেট সভা বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রক্টরের সঙ্গে ভেরিফিকেশনের দাবি জানালে ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাফির নেতৃত্বে অন্য একটি পক্ষ উপাচার্যের দপ্তরে অবস্থান নেয়।

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা সভাকক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করলে অপর পক্ষ তাদের বাধা দেয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তর থেকে সবাইকে বের করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে দপ্তরে তালা লাগানো হয়। পরে উপাচার্যের দপ্তরের বাইরে আবারও হাতাহাতি এবং স্টিক বের করে মারামারির ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে একাধিক বহিরাগতকে ক্যাম্পাসে আনা হয়। তাদের ভাষ্যমতে, ছাত্রদলকর্মী জিবরাইল শরীফ তার পরিচিত তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সদস্য মিশকাতকে ক্যাম্পাসে এনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির বিপক্ষে উস্কানি দেন। এরই একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

বহিরাগতের বিষয়ে ছাত্রদলকর্মী জিব্রাইল শরীফ বলেন, আমাদের সাথে বহিরাগত কোন ছেলে ছিল না। যা ছিল তারা উৎসুক জনতা। আমার জুনিয়র মুসা আত্মরক্ষার্থে তার মটরসাইকেল থেকে লাঠি বের করছিল, তাছাড়া কিছুই না।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, আমরা খবর পাই কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব নির্ধারিত সিন্ডিকেটে বাধা প্রদান করার চেষ্টা করছে। এখানে বহিরাগত কেও সংশ্লিষ্ট কিনা আমাদের জানা নেই। আমাদের সাথে কোন বহিরাগত ছিল না।
এ ঘটনায় রাত সোয়া ১০টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে এক ফেসবুক পেইজে এক সতর্কীকরণ নোটিসে শিক্ষার্থী আহসান হাবীব ও মুস্তাকিম বিল্লাহ শাহরিয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে সতর্ক করা হয়। এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পোষ্টে উল্লেখ করা হয়। 

এ ব্যাপারে শিক্ষার্থী আহসান হাবীব বলেন, শিক্ষক নিয়োগের কিছুদিন আগেই কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব নিয়োগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সুযোগ পেয়েছেন, এমনকি মামলার আসামিরাও নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

তিনি বলেন, এই ন্যায্য ও সাধারণ দাবি জানাতে গিয়ে দেখা যায় প্রশাসন আগে থেকেই তাদের নির্দিষ্ট একটি গ্রুপের লোকজন এবং বহিরাগত তিতুমীর কলেজের কিছু শিক্ষার্থীকে সেখানে অবস্থান নিতে দিয়েছে। একপর্যায়ে তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়ে শান্তিপূর্ণ দাবিকে হাতাহাতির পর্যায়ে নিয়ে যায়।

শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বিএম আলমগীর কবীর জানান, কয়েকদিন আগে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে, সেটাতে অনেকেরই আওয়ামী সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। সেগুলো যাচাই বাছাই না করেই শিক্ষক নিয়োগ আমরা সমর্থন করি না। কয়েকজন শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ জানাতে যায়। আর আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বহিরাগত নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করিয়েছে। আমরা বহিরাগতদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। 

তবে উক্ত ঘটনায় বহিরাগত শনাক্তের জন্য সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. আরফান আলীর নিকট সিসিটিভি ফুটেজ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর চার ঘণ্টা কালক্ষেপণ করেন এবং সর্বশেষ সোমবার রাত ১০ টায় যোগাযোগ করা হলে পরবর্তী দিন (মঙ্গলবার) আবেদনপত্র দিয়ে ফুটেজ সংগ্রহের কথা বলেন। ঘটনাস্থলে বহিরাগত নিয়ে আসার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর বলেন, উক্ত ঘটনায় কোন বহিরাগত আসেনি। ঘটনাস্থলে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরী করায় জড়িতদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।