ক্লাসরুমের বন্ধুত্ব থেকে সংসার—ইউআইইউ’র সমাবর্তনে একসঙ্গে ডিগ্রি পেলেন দম্পতি
- ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৫৩
ক্লাসরুমে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব একসময় গড়ায় সংসারে। সেই গল্পেরই এক অনন্য মুহূর্ত ধরা পড়ল ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ৮ম সমাবর্তনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিকস বিভাগের এক দম্পতি একই সমাবর্তনে একসঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত ইউআইইউর ৮ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মো. জাদিদ হাসান ও তাহমিনা আক্তার ইমু দম্পতির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি তুলে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, তারা দুজনই ইকোনমিকস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার সময় ক্লাসরুমে পরিচয় ও বন্ধুত্বের সূত্র ধরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে দাম্পত্য জীবনে রূপ নেয়। সমাবর্তনের মঞ্চে একসঙ্গে ডিগ্রি গ্রহণের এই মুহূর্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিদের মাঝেও বাড়তি আগ্রহ তৈরি করে।
একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একসাথে সমাবর্তন গ্রহণ ও পড়ার অনুভূতি জানিয়ে মো. জাদিদ হাসান বলেন, একসঙ্গে সমাবর্তন গ্রহণের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। একই বিভাগে এক সাথে পড়াশোনা করা, পাশাপাশি ভার্সিটির একই ক্লাবে একসাথে কাজ করা সবকিছুই ছিল এক দারুণ অভিজ্ঞতা। প্রথম সেমিস্টার থেকেই আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম, পরবর্তীতে বন্ধু থেকে জীবনসঙ্গী আমাদের দীর্ঘ পথচলার এক যৌথ স্বীকৃতি।
এই দম্পতি মনে করেন, এমন অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তাদের পরিবারের। তাহমিনা আক্তার ইমু বলেন, বিশেষ করে আমাদের বাবা-মা, যারা সবসময় আমাদের স্বপ্নের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। এছাড়াও আমাদের শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা ছাড়া এই পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হতো না।
মো. জাদিদ হাসান ও তাহমিনা আক্তার ইমু
মো. জাদিদ হাসান ও তাহমিনা আক্তার ইমু জানান, সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হলো- ক্যাম্পাসে কাটানো সময়গুলো। ক্লাস শেষ করে বন্ধুরা মিলে একসাথে আড্ডা দেওয়া, এক সাথে ভার্সিটির ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, ইভেন্টে কাজ করা—এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই এখন সবচেয়ে বড় স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোন বড় চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি জানিয়ে মো. জাদিদ হাসান বলেন, প্রথম সেমিস্টার থেকেই আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। একে অপরের সহোযোগিতায় আমাদের ছোট বড় সকল সমস্যাগুলোই সমাধান করা সহজ হয়েছে।
ইউআইইউর মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার কথা জানিয়ে এই দম্পতি বলেন, আমরা ইকোনমিকস বিভাগে দক্ষ ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের কথা শুনেই এখানে ভর্তি হই। ক্যরিয়ারের ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিন্তা করে আমাদের এই ইকোনোমিক্স বিভাগটি বেছে নেওয়া।বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শুধু বইয়ের পড়া শেখায়নি বরং নেটওয়ার্কিং, টিম ম্যানেজমেন্ট এবং ধৈর্যশীল হতে শিখিয়েছে। ক্লাব এক্টটিভিটিগুলো আমাদের কর্পোরেট কালচারের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে কাজ করার মাধ্যমে আমাদের সামাজিক দক্ষতা বেড়েছে। যা আমাদের প্রফেশনাল লাইফে কাজ করতে সাহায্য করছে।
ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা জানিয়ে তাহমিনা আক্তার ইমু বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো- নিজ নিজ প্রফেশনে নিজেদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা এমন কিছু করতে চাই যেখানে আমাদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।
হতাশার মুহূর্তে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই দম্পতি জানান, এক জনের খারাপ সময়ে অন্যজনের পাশে থাকা মনোবল যোগাতে সাহায্য করেছে। সামনে ভালো করার জন্য এক নতুন আশা জাগিয়েছে। নতুন শিক্ষার্থী এবং আমার সহপাঠী সবাইকে এইটাই বলতে চাই- আমাদের চরিত্র এবং আচার আচরণে যেন আমাদের শিক্ষার প্রতিফলন ফুটে ওঠে। নয়ত যতোই ডিগ্রির থাকুক না কেন তার কোন মূল্য থাকে না।
তারা আরো জানান, আমরা চাই আমাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে। নৈতিকতা বজায় রেখে নিজের পেশায় সৎ থেকে কাজ করে যেতে।