যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগেনি : ছাত্রশিবির সভাপতি
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৮
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বেকারত্ব, মাদক ও নৈতিক অবক্ষয় সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই সংকটকালে ছাত্রশিবির চরিত্র গঠন ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে ছাত্রসমাজকে নতুন জাগরণের পথে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন ২০২৫ এ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের মাধ্যমে এ ভূখণ্ডের মানুষ রাজনৈতিক মুক্তি ও উন্নত শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের ব্যর্থতায় সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পরবর্তীতে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত একদলীয় শাসন, বাকশাল প্রতিষ্ঠা, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ ও বাকস্বাধীনতা হরণের ফলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তরুণ সমাজের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ও হতাশা তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকেই একটি আদর্শিক ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই প্রেক্ষাপটে সততা ও নৈতিকতার আলো ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিগত সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও জবাবদিহিতার অভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ভোটাধিকার হরণ, ভিন্নমতের দমন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ইসলামী মূল্যবোধ দমনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন দেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। পরিকল্পিতভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ‘ডিহিউম্যানাইজেশন’-এর শিকার করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে শাহবাগকে কেন্দ্র করে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে দমন-পীড়ন চালানো হয়। হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর কঠোর নিপীড়ন চালানো হয় এবং দাড়ি-টুপি পরাকে জঙ্গিবাদের প্রতীক বানানো হয়।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জাহিদুল ইসলাম বলেন, তরুণদের আত্মত্যাগ ও শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা জাতির মধ্যে নতুন আদর্শিক জাগরণ সৃষ্টি করেছে। এই জাগরণ সাহসিকতা ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থার শিক্ষা দিয়েছে।
শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা জাতির মুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট, আবাসন সংকট ও গবেষণার অভাব শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন নষ্ট করছে। এসব সমস্যা সমাধানে ছাত্রশিবির এ বছর যুগোপযোগী ৩০ দফা শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার প্রস্তাবনা পেশ করেছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন : ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা ও তারেক রহমানের জিয়ারত একইদিনে, পরিবর্তন আসছে সূচিতে
ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, সংগঠনটি কোরআন-হাদিস পাঠচক্র, পাঠাগার, বিতর্ক ও সাহিত্যচর্চা, শিক্ষাবৃত্তি, রক্তদান, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সৃজনশীল কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান, রোবটিক্স, গবেষণা ও মিডিয়া সংশ্লিষ্ট আধুনিক কার্যক্রমের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ফিলিস্তিন ও মুসলিম বিশ্বের সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছে। মুসলিম বিশ্ব আজ চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও দায়িত্ববোধ আরও জরুরি।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, ছাত্রশিবিরের ৪৮ বছরের পথচলায় শত শহীদের রক্তে সংগঠনের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। এই শহীদদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও আমানত রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তার নূরকে আরও শক্তভাবে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করবেন।