পাঁচ ক্রিকেটারের নাম প্রত্যাহারের নেপথ্যে ভিন্ন ‘দুর্গন্ধ’, উঠছে প্রশ্ন
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১১
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্বাদশ আসর মাঠে গড়ানোর দুদিন আগে হঠাৎ করেই নাম প্রত্যাহার করে নেন পাঁচ ক্রিকেটার। যেখানে এনওসি না পাওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত কারণের কথা উল্লেখ করেন তারা। তবে অবাক করা বিষয় হলো, এসব ক্রিকেটারের অধিকাংশই সরাসরি চুক্তিতে ফ্র্যাঞ্চাইজি দুটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন এবং বিপিএল মাঠে গড়ানোর সময়ে অনেকেই ফাঁকা থাকবেন। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে, কেবলই এনওসি ইস্যুতে নাম প্রত্যাহার করেছেন তারা। ক্রীড়া বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এর নেপথ্যে ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যদিও এ নিয়ে মুখে কুলূপ এঁটেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ও বিসিবি সংশ্লিষ্টরা। তাই আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যার বাইরে ভিন্ন ইঙ্গিত খুঁজছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
গত ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে একযোগে নাম প্রত্যাহার করেন তিন বিদেশি ক্রিকেটার। এই তালিকায় নিলামের আগে সরাসরি চুক্তিতে দলে ভেড়ানো পাকিস্তানের লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ, আয়ারল্যান্ডের অভিজ্ঞ ব্যাটার পল স্টার্লিং ও শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার-ব্যাটার নিরোশান ডিকভেলা আছেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের দায়িত্বে বিসিবি, স্বস্তিতে ক্রিকেটাররা
স্টার্লিং ও ডিকভেলার বিপিএল থেকে সরে দাঁড়ানোর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে নিজ নিজ ক্রিকেট বোর্ডের ছাড়পত্র (এনওসি) না পাওয়া বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। তবে এর বাইরে ভিন্ন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, ড্রাফটের ভিত্তিমূল্যের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক দাবি করেছিলেন স্টার্লিং, যা নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে তার সমঝোতা হয়নি। যদিও বিষয়টি প্রকাশ্যে কেউই স্বীকার করেনি।
অন্যদিকে আবরার আহমেদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড থেকে এনওসি পেলেও বিপিএলে তার খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আবরারকে পরিকল্পনায় রাখায় ইনজুরি শঙ্কায় বিপিএলে তাকে খেলতে দিতে চাচ্ছে না পিসিবি, এমনটাই জানা যায়। ফলে শেষ মুহূর্তে তার নাম প্রত্যাহারও বিস্ময়ের জন্ম দেয়নি।
স্টার্লিং ইস্যুতে একাধিক সূত্র বলছে, কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে খেলে যাওয়া আইরিশ অধিনায়ক একাধিক টাইগার ক্রিকেটার থেকে বন্দরনগরীর দলটি নিয়ে ধারণা নিয়েছিলেন। যেখানে আর্থিক নিশ্চয়তাসহ বেশকিছু বিষয় তার কাছে যথাযথ মনে হয়নি। একইসঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মালিকপক্ষের সঙ্গে তার বনিবনাও সেভাবে হয়ে না ওঠায় শেষমেশ নিজেকে সরিয়ে নেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। এ ছাড়া লঙ্কান ডিকভেলার সরে যাওয়া নিয়েও একাধিক কারণ সামনে আসছে।
এদিকে চট্টগ্রামের তিন বিদেশির পাশাপাশি সিলেট টাইটান্সের দুই বিদেশি ক্রিকেটারও টুর্নামেন্ট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগেই সরে দাঁড়ান। এর আগে বিপিএলকে সামনে রেখে শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটার অ্যারন জোনসকে দলে ভেড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল সিলেট। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিপিএল না খেলার সিদ্ধান্ত জানান। যদিও ক্রিকেট মহলে গুঞ্জন, বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও শঙ্কা ছিল এই শ্রীলঙ্কান তারকার। তাই বিপিএলকে এবার 'না' বলেন তিনিও।
অন্যদিকে অ্যারন জোনসের বিপিএল খেলা আটকে যায় বোর্ডের ছাড়পত্র না পাওয়ায়। মূলত শ্রীলঙ্কা সফরের ব্যস্ততার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় এনওসি পাননি তিনি। ফলে বিপিএলের এবারের আসর মিস করছেন এই ব্যাটারও।
তবে সব মিলিয়ে পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটারের নাম প্রত্যাহারের ঘটনা বিপিএলকে ঘিরে নতুন করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেকেই এর পেছনে বিপিএলের একাদশ আসরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রভাব দেখছেন। নিয়মিত ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন, আর্থিক অনিশ্চয়তা, সময়মতো পারিশ্রমিক না পাওয়া এবং কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ—সবকিছু মিলিয়েই বিদেশি ক্রিকেটারদের অনীহার বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিসিবির একাধিক সূত্রও ইঙ্গিত দিচ্ছে, অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর না হওয়ায় অনেক বিদেশি ক্রিকেটার এবার ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছেন না। পাশাপাশি তারকা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আশানুরূপ ইতিবাচক বার্তা না পাওয়াও এই অনীহা বাড়িয়ে দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এসব বিষয় জেনেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ফলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বিদেশি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিপিএলের গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে আরেকটি বিব্রতকর অধ্যায় যোগ হওয়ার আশঙ্কাই ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।