মিঠুন চক্রবর্তী নাম শুনে বিস্মিত বিচারক, বললেন, ‘রাম থেকে বাম হলেন কবে?’

ভারতের জনিপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী
ভারতের জনিপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী © আনন্দবাজার

ভারতের জনিপ্রিয় অভিনেতা মিঠুনের পদবি চক্রবর্তী। তার নামের সঙ্গে মিল আরেকজনের, রাজনীতি করেন, দল সিপিএম! তাতেই বিস্ময় প্রকাশ করলেন বিচারক। একটি রাজনৈতিক সংঘাতের মামলায় সম্প্রতি কয়েক জন সিপিএম নেতা হুগলির একটি মহকুমা আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানান। তাঁদের মধ্যে এক রাজ্য স্তরের নেতাও ছিলেন। মিঠুনও আছেন। 

আদালতকক্ষে কাঠগড়ার পাশে সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নেতারা। এক এক করে নাম ডাকা হচ্ছে, আর সিপিএম নেতারা হাত তুলে জানান দিচ্ছেন, তাঁরা হাজির। একেবারে শেষে ডাকা হয় মিঠুন চক্রবর্তীর নাম। বছর ৪৫-এর নেতা হাত তুলে জানান দেন, তিনি হাজির হয়েছেন। 

তখনই বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারক। আদালতকক্ষে তিনি রসিকতা করেই বলেন, ‘আরে! মিঠুন চক্রবর্তী? আপনি তো বিজেপিতে ছিলেন। সিপিএম হলেন কবে?’ এ সময় মিঠুন বিনয়ের সঙ্গে বিচারপতিকে জানান, নাম-পদবির মিল থাকলেও তিনি সিপিএমই করেন।

চলতি বছরের অগস্টে পশ্চিমবঙ্গের হুগলির একটি ঘটনায় আলোড়িত হয়েছিল রাজনীতি। সে সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় বিরোধী দলগুলো। এতে সক্রিয়ভাবে ছিল সিপিএমও। সে মামলাতেই গত সপ্তাহে আগাম জামিন নিতে যান সিপিএম নেতারা। সে শুনানিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। আদালত সিপিএম নেতাদের জামিন মঞ্জুর করেছে।

আদালতকক্ষে ঘটা নাম বিভ্রাট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সিপিএম নেতা মিঠুন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানানো সমীচীন নয়।’ তার ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, ‘তারকা’ মিঠুন চক্রবর্তী যত দিন সুভাষ চক্রবর্তীর (প্রয়াত সিপিএম নেতা) ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তত দিন এই মিঠুনের বিড়ম্বনা হয়নি। 

তার পরে ‘তারকা’ মিঠুন তৃণমূলের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হওয়ায় এবং পরে বিজেপিতে যাওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সিপিএমের মিঠুন শ্রীরামপুরের ভূমিপুত্র। সেই এলাকা তাঁর রাজনীতির পরিসর হলেও জেলার বাম মহলে তিনি পরিচিত মুখ। 

আরও পড়ুন: এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরশাদের পদত্যাগ, প্রার্থী হচ্ছেন না নির্বাচনেও

ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কথিত সিপিএম নেতাদের মতো নন মিঠুন। আরোপিত গাম্ভীর্য নেই। মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ান। পেশায় পর্যটক সমন্বয়ের কাজ করেন। বিভিন্ন প্রান্তে যান পর্যটকদের নিয়ে। বরফের উপর হাঁটেন, ফুটেজের নেপথ্যে বলিউডি গান-সহযোগে রিল বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পোস্টও করেন। 

আবার দল ধর্মঘট ডাকলে কারখানার গেটেও পৌঁছে যান। ঘটনাচক্রে, ‘তারকা’ মিঠুনের ছবি ‘প্রজাপতি ২’ মুক্তি পাওয়ার কাছাকাছি সময়ে তার জীবনেও ‘প্রজাপতি’ এসেছে। তবে সেটি ‘প্রজাপতি ১’। জানুয়ারির মাঝ বরাবর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন। বিয়ের জন্য তাঁর ‘হল’ পেতে কোনও সমস্যা হয়নি।

শেক্সপিয়র লিখেছিলেন, ‘নামে কী যায় আসে!’ কিন্তু নাম-পদবি হুবহু মিলে গেলে কত রকম বিড়ম্বনা যে ঘটে, তা অনেকের জানা। যার টাটকা উদাহরণ মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষ। আরজি কর পর্বে যখন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ চূড়ান্ত বিতর্কে, তখন মুর্শিদাবাদের সন্দীপ ঘোষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন ফেসবুক, মেসেঞ্জারে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণে। 

তার ক্ষেত্রে নাম-পদবির সঙ্গে পেশাও মিলে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতীকী মেরুদণ্ড হাতে নিজের ছবি পোস্ট করে ফেসবুক প্রোফাইলে নামের পাশে লিখেছিলেন, ‘নট দ্য প্রিন্সিপাল’। তবে সিপিএমের মিঠুনকে এখনও তেমন ঝক্কি পোহাতে হয়নি। আপাতত তিনি পর্যটকদের নিয়ে মেঘালয়ে। ফিরে তোড়জোড় শুরু করবেন বিয়ের! খবর: আনন্দবাজার।