প্রথম সমাবর্তন ঘিরে বুটেক্সে উৎসব আমেজ

সমাবর্তন উপলক্ষে বুটেক্সে আলোকসজ্জা
সমাবর্তন উপলক্ষে বুটেক্সে আলোকসজ্জা © টিডিসি

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত সমাবর্তন। এতে অংশ নেবেন ৪ হাজার ১২৬ জন গ্র্যাজুয়েট। ঐতিহাসিক এ অনুষ্ঠান ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

জানা গেছে, আগামী ২৭ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইবার সায়েন্স ও টেকনোলজির চেয়ার অধ্যাপক ড. জুংগাই ওয়াং। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে নতুন রূপে। এরই অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের গাছে গাছে চুনের প্রলেপ ও বিভিন্ন ভবনের দেয়ালকে রাঙানো হয়েছে। ক্যাম্পাসজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নানা ব্যানার ও ফেস্টুন। পাশাপাশি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলোতে বসানো হয়েছে রঙিন বাতি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ। এই অনুষদের ৮৮৭ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নেবেন। এছাড়া, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৬৪২ জন, টেক্সটাইল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৫৫৭ জন, টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ৪৭২ জন ও সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৬৪ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশে নেবেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের জন্য প্রস্তুত হয়েছে সমাবর্তন প্যান্ডেল।

আরও পড়ুন: আসন সমঝোতায় জামায়াত-এনসিপি, সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহেই

সুষ্ঠুভাবে সমাবর্তনটি সমাবর্তনটি সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫টিরও বেশি উপ-কমিটি গঠন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের গাউন, টুপিসহ অন্যান্য উপহার সামগ্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। উপহার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে পাটের ব্যাগ, হুড, চাবির রিং, মেটাল স্যুভেনির, কোর্ট পিন, মগ ও গ্র্যাজুয়েট স্যুভেনির।

এছাড়া, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনারের সাথে বৈঠক করেছেন। সমাবর্তনের দিন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব, এনএসআই, ডিজিএফ, ডিএমপি ও দাঙ্গা পুলিশ। ক্যাম্পাসে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জিএমএজি ওসমানী হলে থাকবে অতিথিদের গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ মামুন কবির বলেন, বিগত পনেরো বছরে বুটেক্সে কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো এই আয়োজন বাস্তবায়ন বর্তমান প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সমাবর্তনকে ঘিরে গত এক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আয়োজক কমিটির সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যাতে অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন করা যায়। প্রথম সমাবর্তনটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতেও নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশাবাদী আমি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, বুটেক্সে প্রথম সমাবর্তন আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই আয়োজন শুধু ডিগ্রি প্রদান নয়, বরং আমাদের দীর্ঘ পথচলার স্বীকৃতি। ১৯২১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা আজ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাতির উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। এই সমাবর্তনের মাধ্যমে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা পেশাজীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে যেখানে জ্ঞান, নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধই হবে তাদের প্রধান শক্তি। আমি প্রত্যাশা করি, বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা দেশ ও বিশ্বের টেক্সটাইল শিল্পে নেতৃত্ব দেবে এবং এই প্রতিষ্ঠানকে আরো গর্বিত করবে।