স্মার্ট হতে হলে বাদ দিতে হবে যে ১০ বদভ্যাস
- ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪২
স্মার্ট হওয়া কি জন্মগত মেধার ব্যাপার? নাকি দামি পোশাক, চটকদার কথা আর সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি? বাস্তবতা হলো, স্মার্টনেস কোনো একদিনে অর্জন করা যায় না, আবার এটা খুব কঠিন কিছুও নয়। আমাদের অনেক ছোট ছোট কাজ, অভ্যাস আর চিন্তার মধ্যেই যে স্মার্টনেস লুকিয়ে থাকে, সেটাই-বা আমরা কয়জন জানি? আমাদের প্রতিদিনের আচরণ, সিদ্ধান্ত আর কিছু অজান্তে গেঁথে থাকা বদভ্যাসই নির্ধারণ করে আমরা কতটা স্মার্ট। কিছু কাজ যদি আমার-আপনার অভ্যাসে থেকে যায়, তবে স্মার্টনেসের পথের এই বাধাগুলো দূর করে ফেলার মোক্ষম সময় কিন্তু এখনই।
আত্মতুষ্টিতে ভোগা
অনলাইনের যুগে ‘জেন-জি’র অনেকেই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন। কিন্তু স্মার্ট হওয়ার জন্য নিজেকে কখনো খুব মেধাবী মনে করা উচিত নয়। স্মার্ট মানুষ আত্মবিশ্বাস ও আত্মতুষ্টি আলাদা করতে জানেন। তারা নিজেদের কমতি চিহ্নিত করে শেখার মধ্যে ব্যস্ত থাকেন এবং সবসময় আরও ভালো হওয়ার চেষ্টা করেন।
অন্যের দোষ খোঁজা
যেকোনো ভুল হলেই নিজের দায় এড়িয়ে অন্যকে দোষারোপ করা। এতে করে শেখার সুযোগ নষ্ট হয়। স্মার্ট মানুষ নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
নিজেকে সবসময় সঠিক প্রমাণের চেষ্টা
অনেক মানুষই মনে করেন, সব পরিস্থিতিতে তাঁদের কথাই ঠিক, এমন মানসিকতা ব্যক্তিত্বের বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবে ভুল স্বীকার করার সক্ষমতাই একজন স্মার্ট ও পরিণত মানুষের অন্যতম গুণ।
অকারণে তর্কে জড়ানো
অপ্রয়োজনীয় তর্কে জড়িয়ে পড়া সময় ও মানসিক শক্তির অপচয় ঘটায়। বিশেষ করে নিজের মত অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। স্মার্ট মানুষ জানেন, সব বিষয়ে তর্ক জিতে নেওয়াই সাফল্য নয়; বরং কখন চুপ থাকতে হবে এবং কখন ভিন্নমতকে সম্মান করতে হবে—এই বোধই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
সময় অপচয় করা
সময় মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কিন্তু অনেকেই অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করে নিজের সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেন। অযথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থাকা, লক্ষ্যহীন কাজ বা অগ্রাধিকারহীন ব্যস্ততা ব্যক্তিগত উন্নয়নের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। স্মার্ট হতে হলে সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হওয়া জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগী হওয়াই সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে।
অন্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হওয়া
স্মার্ট ব্যক্তি কখনো অন্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়। সহযোগিতা চাওয়া এক কথা, পুরোপুরি অন্যের ওপর নির্ভর করা আরেক কথা। স্মার্ট মানুষ জানেন, আগে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত, তারপর প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিতে হয়।
খারাপ সঙ্গ
মানুষের চিন্তা ও আচরণ অনেকটাই তার আশপাশের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ সবকিছুতেই সমস্যা খোঁজে, ব্যর্থতার ভয় দেখায় এবং অন্যকে নিরুৎসাহিত করে। এমন মানুষের সান্নিধ্যে থাকলে আত্মবিশ্বাস কমে যায়, নতুন চিন্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং সৃজনশীলতা ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে।
স্মার্ট মানুষ সচেতনভাবে ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের সঙ্গ বেছে নেন, যারা সমাধানমুখী চিন্তা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়।
নতুন কিছু শেখা বন্ধ করে দেওয়া
‘আমি সব জানি’ এই মনোভাবই মানুষের অগ্রগতির সবচেয়ে বড় শত্রু। পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে; জ্ঞান, প্রযুক্তি ও দক্ষতার ক্ষেত্রেও প্রতিদিন নতুন কিছু যুক্ত হচ্ছে। শেখা বন্ধ করে দিলে মানুষ সময়ের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে।
স্মার্ট মানুষের পরিচয় হলো আজীবন শেখার মানসিকতা। তারা ভুল থেকে শেখে, নতুন জ্ঞান গ্রহণে আগ্রহী থাকে এবং নিজেকে নিয়মিত হালনাগাদ করে।
ভুল হওয়ার ভয়
ভুল হওয়ার ভয় অনেক সময় মানুষকে নতুন কিছু শুরু করতে বাধা দেয়। ব্যর্থতার আশঙ্কায় সুযোগ হাতছাড়া হয়, সম্ভাবনা অঙ্কুরেই নষ্ট হয়ে যায়। অথচ জীবনের প্রায় সব সাফল্যের পথেই ছোট-বড় ভুল লুকিয়ে থাকে।
স্মার্ট মানুষ ভুলকে লজ্জা নয়, শেখার অংশ হিসেবে দেখেন।
আরও পড়ুন : শীতের সময়ে কানে ব্যথায় কাবু? নিরাময়ের কিছু সহজ উপায়
অতীত নিয়ে পড়ে থাকা
অতীতের ভুল, ব্যর্থতা বা দুঃখজনক অভিজ্ঞতা নিয়ে বারবার ভাবলে মানসিক চাপ বাড়ে এবং বর্তমানের ওপর মনোযোগ নষ্ট হয়। যা আর বদলানো সম্ভব নয়, তা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
স্মার্ট মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নেন, কিন্তু সেখানে আটকে থাকেন না। তারা বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎকে গড়ার দিকে মনোযোগী হন।
প্রতিবেদনটির তথ্য হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ (এইচবিআর),
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ) ও
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) থেকে সংগৃহীত।