স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে ড. আসিফ নজরুল
কেবল ডিগ্রি নয়, সক্ষমতা ও শৃঙ্খলাও জরুরি
- টিডিসি ডেস্ক
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৫৩
বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু ডিগ্রি অর্জন যথেষ্ট নয়; সক্ষমতা, শৃঙ্খলা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) পূর্বাচল নতুন শহরে অবস্থিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক অর্জন থাকলেও টেকসই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। পুলিশ, বিচার ও প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় অগ্রসরমান অবস্থায় থাকলেও গত দেড় দশকে তাদের ভিত দুর্বল করা হয়েছে। ফলে সেগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপের অগ্রযাত্রা প্রমাণ করে যে দেশ গঠনে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যেসব দেশ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পেরেছে, তারাই এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যক্তি ও পরিবার প্রাধান্য পেয়েছে, প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে অর্জন থাকলেও তা টেকসই হয়নি।
বক্তব্যের শুরুতেই ওসমান হাদির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান আসিফ নজরুল এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের প্রতিনিধি হিসেবে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ।
তিনি বলেন, আজকের গ্র্যাজুয়েটরা মেধাবী ও সাহসী; কারণ জ্ঞানার্জন এখন বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার পরিসরও বিস্তৃত হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সম্ভাবনা হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, তরুণদের মানবতার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান। এছাড়া বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ডা. এ. এম. শামীম, ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, উপউপাচার্য অধ্যাপক ডা. নওজিয়া ইয়াসমীনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা।
সমাবর্তনে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের মোট ৬৭২ জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল, চারজন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর সিলভার মেডেল এবং ২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
সমাবর্তন উপলক্ষে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, শিক্ষক ও গ্র্যাজুয়েটরা সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করে সমাবর্তন শোভাযাত্রায় অংশ নেন। দিনব্যাপী সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অ্যালামনাই, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বর্তমানে দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ছয়টি সমাবর্তনে ১৫ হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েট স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালে। সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ, যেখানে গাউন ও হ্যাট পরিহিত গ্র্যাজুয়েটদের আনন্দ ও স্মৃতিচারণে পুরো প্রাঙ্গণ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।