শ্রমিক নেতা দিপু দাস ও বিএনপি নেতার কন্যাশিশু হত্যার বিচার দাবি সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:১১
ময়মনসিংহের শ্রমিক নেতা দিপু চন্দ্র দাস এবং লক্ষ্মীপুরে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগে বিএনপি নেতার শিশু কন্যা হত্যার কঠোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ। একই সঙ্গে উভয় ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও কাতারের নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. হাসান মাহমুদ এবং সেক্রেটারি ও কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির ইন্সট্রাক্টর তাইয়িব আহমেদ এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ ময়মনসিংহের ভালুকায় শ্রমিক নেতা দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড এবং লক্ষ্মীপুরে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগে বিএনপি নেতার সাত বছর বয়সী শিশু আয়েশা আক্তারের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
এতে বলা হয়, ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডকে যেভাবে ধর্মীয় উসকানির রূপ দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা ভয়ঙ্করভাবে বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করি। নিহতের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও অনুসন্ধানী তথ্যে স্পষ্ট এটি কোনো ‘উগ্রবাদী জনতার’ স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা নয়; বরং শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কারণে পরিকল্পিতভাবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ সৃষ্টি করে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা, পুলিশের কাছে তথ্য না দেওয়া এবং ভুক্তভোগীকে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর অপরাধের ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনায় ধর্মকে দায়ী করে মুসলমানদের সম্মিলিতভাবে ‘ভিলেন’ বানানোর অপচেষ্টা আমরা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
অন্যদিকে লক্ষ্মীপুরে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে একজন বিএনপি নেতার পরিবারকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা এবং সাত বছরের এক শিশুর মৃত্যু মানবতা, সভ্যতা ও আইনের চরম অবমাননা। ঘুমন্ত শিশু ও পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে মারার এই নৃশংসতা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন অপরাধ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা, যার সঙ্গে জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকুক বা না থাকুক তাদের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ বলছে, সকল হত্যাকাণ্ডই সমান অপরাধ এবং কোনো অপরাধের ওপর ধর্ম, পরিচয় কিংবা রাজনৈতিক ট্যাগ বসিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা নিন্দনীয় ও বিপজ্জনক। ব্যক্তিগত বিরোধ, শ্রমিক অধিকার আন্দোলন বা রাজনৈতিক সহিংসতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘ধর্মীয় উসকানি’ হিসেবে উপস্থাপন করা একটি সুস্পষ্ট প্রপাগান্ডা, যা সামাজিক বিভাজন উসকে দেয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সত্য উদঘাটন করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা সামাজিক জনগোষ্ঠীকে দায়ী করে পরিস্থিতি ধামাচাপা দেওয়া নয়।
জোর দাবি জানিয়ে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ ও শিশুহত্যার ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীকে অবিলম্বে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ভাষা ও আচরণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ধর্ম বা কোনো জনগোষ্ঠীকে অযথা অপরাধের দায় বহন করতে না হয়। পাশাপাশি শ্রমিক অধিকারকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ও দৃশ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের জরুরি দাবি।
ন্যায়বিচার বিলম্বিত হলে তা প্রকারান্তরে অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার শামিল হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এই দাবিতে অবিচল থাকবে।