এত বড় জানাজা আগে কখনো দেখিনি: আসিফ নজরুল
- ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৩
জাতীয় সংসদ ভবনে যে জানাজা দেখেছেন, কোনোদিন এত বড় কোনও জানাজা দেখেননি বলে জানিয়েছন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী তরুণ নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদির অকাল মৃত্যুতে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। জাতীয় সংসদ ভবনে আমি গতকাল যে জানাজা দেখেছি, আমার মনে হয়, আমি কোনোদিন এত বড় কোনও জানাজা দেখিনি।’
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) পূর্বাচল নতুন শহরে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাসে সপ্তম সমাবর্তনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘হাদির জানাজায় মানুষের যে আহাজারি দেখেছি, মানুষের যে দোয়া দেখেছি হাদির জন্য, আমি বিশ্বাস করি হাদিকে বেহেশতের সর্বোচ্চ জায়গায় আল্লাহ স্থান দেবেন। হাদি আমাদের এ পৃথিবীর থেকে অনেক ভালো জায়গায় অবস্থান করছেন।’
আসিফ নজরুল বলেন, আজকে হাদির জন্য এত মানুষ কেন শোক প্রকাশ করেছে, কারণ সে নিজের কথা ভাবত না। সে অন্যের কথা ভাবতো, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতো। সৎ জীবন যাপন করত, তার আশেপাশে সবাইকে ভালোবাসতো।
আইন উপদেষ্টা একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি একটি ব্যক্তিগত ঘটনা বলি, হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে হাদির সংগঠনের নেতারা আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, আমি সেখানে ছিলাম। তার সংগঠনের যে সাধারণ সম্পাদক আছে, জাবের, সে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল যে, তারা একদিন অফিসে ঘুমিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘কার্পেটের মধ্যে ঘুমিয়েছিল তারা। একটা বালিশ ছিল, সেটি সভাপতি হাদিকে দিয়েছিল জাবের। হাতের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল জাবের। সকালে যখন ঘুম ভেঙেছে দেখে, তার মাথার নিচে বালিশ, আর হাদির হচ্ছে জাস্ট কার্পেটের ওপর মাথা রেখে শোয়া। বলে আমি টেরও পাইনি। কখন উনি ওনার বালিশটা আমার মাথায় দিয়ে গেছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আরেকটি অদ্ভুত ঘটনা শুনলাম, যেটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। তাদের এক কর্মীর একবার অনেকগুলো কাপড় জমে গিয়েছিল। খুব ক্যাম্পেইন করতো। ভাবছিল যে, আজকে ধোবে। কিছুক্ষণ পর দেখল যে, হাদি বাথরুম থেকে বের হয়ে আসছে। তার হাতে হচ্ছে, তার যে কাপড়গুলা ফেলে রেখেছিল ধোয়ার জন্য, সেগুলো সব সে নিজে ধুয়ে নিয়ে এসছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এগুলো অবিশ্বাস্য মনে হয়, একজন লিডার একটা মানুষ, তার যারা সহকর্মী আছে, তার যারা সাথে কাজ করে, তাদেরকে এতটা ভালোবাসতে পারে। আমি যারা তার জুনিয়র, এ গল্পগুলো, ছোট গল্প, কিন্তু এখান থেকে অনেক শেখার আছে। আমার মনে হয়, সে তার চারপাশের মানুষকে এতটাই ভালোবেসেছে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন প্রলোভনকে জয় করে এতটাই সৎ থেকেছে এবং এতটাই নির্ভীক থেকেছে, এটার প্রতিদান মানুষ কীভাবে দিতে পারে, কালকে এটা একটা বিরাট উদাহরণ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখান থেকে আমাদের সবার শেখার আছে। তবে আমি খুব আনন্দ অনুভব করছি, গৌরব অনুভব করছি এটা বলে যে, হাদির প্রজন্মই তো তোমরা।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে বিভিন্ন লড়াইয়ে দেখেছি। আমি তোমাদেরকে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে দেখেছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে দেখেছি। কোটাবিরোধী আন্দোলনে দেখেছি। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালে দেখেছি।’
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের ৬৭২ জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল, চারজনকে ভাইস-চ্যান্সেলর সিলভার মেডেল এবং ২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মেধার স্বীকৃতি এবার সোনায়, সমাবর্তনের আলোয় উদ্ভাসিত মারুফা-রিতু-জাহিন
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান। এর আগে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্য, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য, শিক্ষক ও গ্র্যাজুয়েটরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।
আরও উপস্থিত ছিলেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ডা. এ এম শামীম, ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নওজিয়া ইয়াসমীনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অ্যালামনাই, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এসইউবি) এখন দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ছয়টি সমাবর্তনে ১৫ হাজারেরও অধিক গ্রাজুয়েট স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালে।