জানাজার নামাজের নিয়মকানুন, গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি © সংগৃহীত

মৃত্যু সব প্রাণীর জন্য অনিবার্য। জন্ম নিলে মরতে হবেই। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।’ (সুরা: আনয়াম ১৮৫) এজন্য সর্বাবস্থায় আমাদের উচিত মৃত্যুকে স্মরণ করা। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি জীবনদান করেন আর তিনিই মৃত্যু ঘটান। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই, কোনো সাহায্যকারীও নেই।’ (সুরা: তাওবা ১১৬)।

জানাজার নামাজ হলো মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া। এটা নামাজের আকারে করা হয়। মৃত মুসলমানকে কবর দেয়ার পূর্বে সংগঠিত হয় এ নামাজ। এ নামাজকেই জানাজার নামাজ বলা হয়। মুসলিম কোনো ব্যক্তি ইন্তিকাল করলে মুসলমানদের জন্য এ নামাজ আদায় করা ফরজে কিফায়া।
 
জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজ একজন ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে বা দলবদ্ধভাবে সংগঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা বেজোড় সংখ্যক কাতারে বা সারিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এ নামাজ আদায় করেন। নামাজ আদায় করতে হয় চার তকবিরের মাধ্যমে। এ নামাজে কোনো রুকু সিজদা নেই। চার তাকবির দেয়ার পর সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে এ নামাজ শেষ হয়। সাধারণত জানাজার নামাজের শেষে মুনাজাত বা দোয়া করতে হয় না। কারণ এ নামাজের মাধ্যমেই মৃতের জন্য দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে আলাদা দোয়া করার প্রয়োজন নেই। জানাজা শেষে মৃতব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব কবরস্থ করার নির্দেশনা রয়েছে।

জানাজার নামাজের বিধান
জানার নামাজ ফরজ কিফায়া। ফরজে কিফায়া হলো সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব। অর্থাৎ কোনো মুসলমানের মৃত্যু হলে মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে অবশ্যই জানাজার নামাজ আদায় করতে হবে। তবে কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ মৃতব্যক্তির উপর জানাজার নামাজ আদয় না করে, তাহলে ঐ এলাকার সবার উপর ফরজ ছেড়ে দেয়ার গুনাহ হবে।
 
জানজার নামাজে উপস্থিত হওয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত
 জানাজার নামাজে উপস্থিত হওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। একজন মানুষ মারা গেলে মুমিনের জন্য কর্তব্য বিষয় আছে কয়েকটি। নবীজি সা. বলেন, ‘এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের অধিকার পাঁচটি। ১. সালামের উত্তর দেওয়া, ২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নেওয়া, ৩. জানাজার অনুসরণ করা, ৪. দাওয়াত কবুল করা, ৫. হাঁচির উত্তর দেওয়া। (বুখারি ১২৪০)
 
রাসুলুল্লাহ সা. জানাজার নামাজে উপস্থিত হতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃতের জন্য নামাজ আদায় করা পর্যন্ত জানাজায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কিরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দুই কিরাত। জিজ্ঞাসা করা হলো দুই কিরাত কী? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সওয়াব)।’ (বুখারি ১৩২৫)
 
এছাড়াও জানাজার নামাজে উপস্থিত হয়ে মুমিনরা নামাজের মাধ্যমে মৃতব্যক্তির পরকালীন জীবনের কল্যাণ কামনা করে। আল্লাহর দরবারে মুমিনের এই সুপারিশের বিশেষ মূল্য আছে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কোনো মুসলিম মারা গেলে, তার জানাজায় যদি এমন ৪০ জন দাঁড়িয়ে যায়, যারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে না, তবে মহান আল্লাহর তার অনুকূলে তাদের প্রার্থনা কবুল করেন।’ (মুসলিম ২০৮৮)

জানাজার নামাজের আরবি ও বাংলা নিয়ত
জানাজার নামাজের নিয়ত কেউ যদি আরবিতে পারে ভালো। আরবিতে বলতে না পারলেও সমস্যা নেই। বাংলাতে বললেও হয়ে যাবে। আরবি নিয়ত এভাবে বলতে পারেন,
জানাজার আরবি নিয়ত
 
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবা আ তাকবিরাতি সালাতিল জানাজাতি ফারজুল কেফায়াতি ওয়াসসানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াসসালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লি হাযাল মাইয়্যিতি এক্কতিদায়িতু বিহাযাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতে আল্লাহু আকবার।’ এখানে নিয়তে ‘লি হাযাল মাইয়্যিতি’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লি হাযিহিল মাইয়্যিতি’ বলতে হবে।
 
জানাজার বাংলা নিয়ত
জানাজার নামাজের আরবিতে নিয়ত করা জরুরি না। বাংলাতেও নিয়ত করতে পারবেন। ‘আমি চার তাকবিরের সঙ্গে ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে এ ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি আল্লাহু আকবার।’

 
জানাজার নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
জানাজার নামাজ চার তাকবিরে দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়। প্রথম তাকবিরে হাত উঠানোর পর অন্য তিন তাকবিরের সময় হাত উঠাতে হবে না। ‘আল্লাহু আকবার’ প্রথম তাকবির বলে হাত তুলে অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেধে সানা পড়তে হবে। আরবিতে সানা:

سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
 
উচ্চারণ: ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’ সানা পড়ার পর দ্বিতীয় তাকবির ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আর হাত উঠাবে না। দরুদ শরিফ পড়বে। সাধারন নামাজে তাশাহুদের পর যে দরুদ পড়া হয়, সেটা পড়বে। দরুদ শরিফ:

للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।’ দরুদ শরিফ পড়ার পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তৃতীয় তাকবির দিবে। এ ক্ষেত্রেও হাত উঠাবে না। এরপর জানাজার দোয়া পড়তে হবে।
 
জানাজার নামাজের দোয়া
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاْيمَانِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও সগিরিনা ও কাবিরিনা ও জাকারিনা ও উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান।’

নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وْاَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا
 
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফাআ।’
 
নাবালিকা মেয়ের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًاوَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعَةً وَمُشَفَّعَة

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাজ আল হা লানা ফারতাও ওয়াজ আল হা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আল হা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান।’ এরপর আল্লাহু আকবার বলে চতুর্থ তাকবির দিয়ে একটু নীরব থেকে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
 
জানাজার নামাজের তাকবির ছুটে গেলে করণীয়
যদি কারো নামাজে আসতে দেরি হয়ে যায়, তবে ইমামকে অনুসরণ করতে হবে। সম্ভব হলে চার তাকবির আদায় করে নিতে হবে, তা যদি সম্ভব না হয়, তবে ইমামকে অনুসরণ করে সালাম ফিরিয়ে নিয়ে জানাজা নামাজ সম্পন্ন করবেন। জানাজা নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়, তাই এটি কাজা পড়ার সুযোগ নেই। চেষ্টা করবে সালামের আগেই ছুটে যাওয়া তাকবিরগুলো দিয়ে নিতে।
 
জুতা পায়ে জানাজার নামাজ
এখন অনেক মানুষকে দেখা যায় জুতা পায়ে দিয়ে জানাজার নামাজ আদায় করছেন। জুতায় নাপাক লেগে না থাকলে জানাজার নামাজের সময় জুতা পায়ে রাখতে অথবা জুতার ওপর দাঁড়াতে অসুবিধা নেই। তবে জুতা পরা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর স্থানও পবিত্র হওয়া জরুরি। আর জুতার নিচের অংশে নাপাকি থাকলে পা থেকে খুলে জুতার ওপর দাঁড়াবেন। এ ক্ষেত্রে জুতা পরে জানাজার নামাজ পড়া যাবে না। (আল-মুহিতুল বুরহানি: ২/২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ২/৩১; আল-বাহরুর রায়িক: ২/১৭৯; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকি, পৃষ্ঠা ৩১৯; রদ্দুল মুহতার: ১/৪০২)
 
সন্তান জানাজা পড়ালে মৃত বাবার কোন ফায়দা হয়?
সন্তান জানাযার নামায পড়ালে মৃত পিতার কোন ফায়দা হবে মর্মে কোন ফযীলত আসেনি। তবে সন্তানের দুআ কবরে পৌছে মর্মে হাদীসে এসেছে। সেই হিসেবে জানাযাও যেহেতু দুআ। তাই এর দ্বারা মৃত পিতা উপকৃত হন বলা যায়। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন মানুষ মারা যায়, তখন তারা আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া। দ্বিতীয় হল উপকারী ইলম এবং তৃতীয় হল নেককার সন্তানের দুআ। (মুসলিম ১৬৩১)
 
জানাজার নামাজ পড়াতে ইতকাফকারী মসজিদের বাইরে আসার অনুমতি আছে?
সুন্নাতে মুআক্কাদা আলাল কিফায়া ইতিকাফে বসার পর মু’তাকিফের জন্য জানাজা পড়াতে মসজিদের বাইরে বের হলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। মসজিদের আঙ্গিনা যেহেতু মসজিদের বাইরের অংশ, তাই আঙ্গিনায় বের হলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। (ফতোয়ায়ে শামি ৩খণ্ড ৪৩৪ পৃষ্ঠা, হেদায়া ১ম খণ্ড ২৩০ পৃষ্ঠা)
 
মসজিদের ভিতর জানাজার নামাজ পড়ার হুকুম কী?
জানাজার নামাজ আদায় করার জন্য মাঠ থাকা সত্বেও মসজিদের ভিতরে জানাজার নামাজ পড়া মাকরূহে তাহরিমি। পড়ে নিয়ে জানাজা আদায় হয়ে যাবে। হজরত আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে জানাজার নামাজ পড়লো, তাতে তার কোন সওয়াব হলো না। (আবু দাউদ ৩১৯১, ইবনে মাজাহ ১০৯, মুসনাদে আহমাদ ৯৮৬৫)
 
একাধিক মৃতের এক সঙ্গে জানাজা আদায়
যদি মৃতব্যক্তি একাধিক হয়, প্রত্যেক মাইয়্যিতের জন্য পৃথক পৃথক জানাজা পড়া উত্তম। কেননা একাধিক মরদেহ উপস্থিত হলে সেক্ষেত্রেও প্রত্যেকের জন্য আলাদা জানাজা পড়াই উত্তম। তবে সকলের জানাজা একত্রে পড়াও জায়েজ আছে। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/১২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/২১৮; হাশিয়াতুত তহতাবি আলাল মারাকি ৩২৫)

গায়বানা জানাজা
জানাজা নামাজ আদায়ের জন্য মৃতের দেহ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। অনুপস্থিত মরদেহের গায়েবানা জানাজা নামাজ সহিহ নয়। গায়েবানা জানাজা হলো মৃত মুসলিমের জন্য নামাজ আদায়, কিন্তু মৃতব্যক্তির মরদেহ উপস্থিত থাকে না। এটাকেই গায়েবানা জানাজা বলে। যদি এমন এক জায়গায় মুসলিম মারা যায়, যেখানে তার জানাজার নামাজ পড়ানোর মত কোন মুসলিম না থাকে, অথবা তাকে জানাজার নামাজ ছাড়াই কবর দেওয়া হয়েছে। তখন গায়েবানা জানাজা পড়া জায়েজ আছে। এছাড়া সাধারণ অবস্থায় গায়েবানা জানাজা জায়েজ নেই। (ইবনে হিব্বান ৩০৮৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তার অসংখ্য সাহাবি মদিনার বাইরে শহিদ হয়েছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাদের গায়েবানা জানাজা পড়ার প্রমাণ নেই।

রাসুল সা. বাদশাহ নাজ্জাশির গায়েবানা জানাজা পড়েছেন। এটা বিশেষ কারণে পড়েছিলেন। অনেক মুহাদ্দিসরা নাজাশির জানাজা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হল, নাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানাজা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাজা পড়িয়েছেন। আল্লামা যায়লায়ি রহ. আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ, আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ও আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (নাসবুর রায়া ২/২৮৩; যাদুল মাআদ ১/৫০২; ফয়যুল বারী ২/৪৭০)