মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নির্মাণে ব্যর্থতা রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয়: রাবি উপাচার্য

অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব
অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব © টিডিসি ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেছেন, বিজয়ের ৫৪ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস গড়ে তুলতে পারিনি, এটি আমাদের রাষ্ট্রের জন্য কোনো ভালো সংবাদ নয়। তিনি বলেন, এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের একটি স্পষ্ট ও সর্বজনগ্রাহ্য ব্যাখ্যা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব বই ও দলিল রচিত হয়েছে, তার অনেকগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রাবি প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

উপাচার্য আরও বলেন, যারা সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন তারা ধীরে ধীরে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। বর্তমানে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব হলো, নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার। দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা পরম সৌভাগ্যবান উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি, কিন্তু তুলনামূলকভাবে অল্পসংখ্যক মানুষ সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন মজুমদারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, আজকে যেসকল মুক্তিযুদ্ধারা সম্মানিত হলেন আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। ৭১ সালে যারা যুদ্ধ করেছিলেন তারা সবাই অন্যায়, অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। আজকে প্রশাসন থেকে তাদের সম্মানিত করতে পেরে আনন্দ লাগছে৷ মুক্তিযুদ্ধরা যে আশা নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল যে সুন্দর, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য— কিন্তু আমরা তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ৷ বিজয়ের ৫৪ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা এখনো সুশৃঙ্খল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি নাই। যার কারণে আমাদের ছেলেদের বারবার রক্ত দিতে হচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মামুনুল কেরামত বলেন, ১৯১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা পেলাম কিন্তু কেনো? কারণ আমাদের সাথের বৈষম্য লাঘব করা। ১৯৬৯ সালে ১১ দফা ছাত্র মুভমেন্ট এটা কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধকে আরো বেশি গতিশীল করেছে। স্বাধীনতার পক্ষে আরো বেশি শক্তি দিয়েছে। আবার একই ঘটনা ১৯৭৫ সালে ডেমোক্রেসি গণতন্ত্র আন্দোলন ছাত্র সমাজেরই নূর হোসেন শহীদ হলেন। 

তিনি আরও বলেন, তার পরবর্তীতে আবার জুলাই ২৪ এ ওই একই ছাত্র ওই ছাত্র সমাজ এগিয়ে গিয়েছে আবু সাঈদসহ আরও ১৪-১৫শ মানুষ জীবন দিয়েছে। তারা এসব করেছে দেশকে ভালোবেসেই। এ কাজগুলো করেছিলেন দেশের মুক্তির জন্য। এই কাজটা করেছিলেন দেশে জাস্টিসের জন্য। সেই কাজগুলো করেছিলেন দেশের মানুষ যাতে অর্থনৈতিক মুক্তি পায়। সবাই যেন সমতায় থেকে চলতে পারে। তাই আমাদের উচিত তাদের এই অবদানকে মনে রেখে তাদের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা।

অনুষ্ঠানের শেষে ৩২ মুক্তিযোদ্ধাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.মো. মতিয়ার রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।