৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া তামীম বললেন— ভর্তি প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বড় প্রেরণা আমার ‘নিজের স্বপ্ন’
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২২
২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষায় ৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তামীম হাসান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৪৮তম হয়েছেন। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সি ইউনিটে ৫ম স্থান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি ইউনিটে ৮৯তম, বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ৯ম স্থান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বি ইউনিটে ২৭৩তম স্থান অর্জন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার এ সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা ছিল তার নিজের স্বপ্ন।
নিজের সাফল্য সম্পর্কে তামিম হাসান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। এটা আমার জন্য এক অভূতপূর্ব আনন্দের মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রস্তুতি, অগণিত রাতের নির্ঘুম অধ্যয়ন, আর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়ে যাওয়া— সবকিছুরই যেন এক অনবদ্য স্বীকৃতি পেলাম এই ফলাফলগুলোর মাধ্যমে। আমি কৃতজ্ঞ আমার পরিবার, শিক্ষক এবং বন্ধুবান্ধবদের প্রতি, যারা সবসময় পাশে ছিল এবং সব পরিস্থিতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছে।
ভর্তি প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, যেহেতু অ্যাডমিশন পরীক্ষাগুলো হলো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, সেহেতু এখানে অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর জন্য আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিই সেভাবে এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলে পর্যাপ্ত হবে না। কেননা এখানে পাস করাটা মুখ্য বিষয় নয়, বরং অন্যদের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে রাখাটাই মূল বিষয়। আমার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই অ্যাডমিশনের প্রিপারেশন একবার শেষ করে ফেলার জন্য। যদিও পরিপূর্ণভাবে সব কিছু পড়ে শেষ করে ফেলতে পারিনি, তবুও ইংরেজির জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতে পারায় আমার অ্যাডমিশনের সময়টাতে এটার প্রতি বেশি তটস্থ থাকতে হয়নি। কেননা কম বেশি সবাই ইংরেজি বিষয়টা নিয়ে একটু বেশি তটস্থ থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, আমি অন্যান্য বিষয়ের প্রতি খুব ভালোভাবেই সময় বণ্টন করতে পেরেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি কোনো একটি বিষয় পড়ার সময় সেটি সূক্ষ্মভাবে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম, যার কারণে আমাকে অনেকগুলো বই সংগ্রহ করতে হয়েছিল। আমি যে টপিক পড়তাম সেই টপিক বিভিন্ন বই থেকে খুঁটিনাটি সব কিছুই পড়ে ফেলতে চেষ্টা করতাম। যার ফলে আমার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করতো যে এই টপিক থেকে যেভাবেই প্রশ্ন আসুক না কেন আমার আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। আমি যখন পড়তাম, তখন পরবর্তী টপিকে যাওয়ার আগেই নিজে সেটা আরেকজনকে বুঝাতে পারবো এমন আয়ত্ত না আসা পর্যন্ত সেই টপিকটাই পড়তাম।
প্রস্তুতিকালীন অনুপ্রেরণা কী ছিল জানতে চাইলে তামীম বলেন, প্রস্তুতির সময় আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল নিজের স্বপ্ন। মা-বাবার মুখে হাসি দেখার ইচ্ছা আমাকে অনেক রাত জাগতে সাহস দিয়েছে এবং নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ ছিলই সবসময়। আর ভাবতাম-পথ যত কঠিন হবে, শেষটা তত সুন্দর হবে। এছাড়াও ভাবতাম, পরীক্ষা হলো একটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। ইতিহাসের পাতায় বহু যুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ আছে, যেখানে মানসিক শক্তিহীন শক্তিশালী পক্ষের পতন হয়েছে দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন তুলনামূলক দুর্বল পক্ষের কাছে। তাই সবসময় নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখার চেষ্টা করতাম। আমার দ্বারা হবে না বা আমি কি আদৌ পারবো কিনা– এই ধরনের চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে ফেলতাম বরং সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটা ভাবার চেষ্টা করতাম। এই বিষয়ে Earl Nightingale বলেছিলেন, ‘You become what you think about.’ তাই প্রতিক্ষেত্রেই ইতিবাচক মনোভাব রাখতে চেষ্টা করতাম। এই ছোট ছোট ভাবনাগুলোয় ছিল আমার অনুপ্রেরণার শক্তি।
প্রস্তুতির সময় হতাশা এসেছিল কি না— এমন প্রশ্নে এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রস্তুতির পথে এমন অনেক সময় ছিল, যখন মনে হতো আমি পারব না। চারপাশের সবার অগ্রগতি দেখে নিজেকে অনেক পিছিয়ে গেছি মনে হতো। এরপর নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম যে এখনো শেষ হয়নি, অনেক পথ আছে। ছোট ছোট অগ্রগতিকে গুরুত্ব দিয়েছি, দিনের একটা লক্ষ্য ঠিক করতাম, সেটা পূরণ করবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম। পরিবারের সাপোর্ট, কিছু কাছের মানুষের উৎসাহ, আর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা— এসবই মানসিকভাবে সাহস জুগিয়েছে।
পরীক্ষার হলের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, পরীক্ষার হলে মাথা ঠান্ডা রাখাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষায় আমি প্রথমেই সাধারণ জ্ঞান উত্তর করতাম। সেক্ষেত্রে প্রথমে যেগুলো পারতাম, সেগুলো একনাগাড়ে প্রশ্নে ছোট করে দাগিয়ে ফেলতাম। প্রশ্নে দাগানো শেষ হলে তারপরে প্রশ্নগুলোর উত্তর উত্তরপত্রে ভরাট করে ফেলতাম। এতে অনেক সময় বেঁচে যেতো, কেননা একটা প্রশ্ন পড়ে আবার উত্তর করা, আবার প্রশ্ন পড়া- এতে সময় বেশি অপচয় হয়। আর যে প্রশ্ন পারতাম না, সেই প্রশ্নগুলো স্কিপ করতাম। জিকের পরে ধারাবাহিকভাবে একই পদ্ধতিতে বাংলা এবং ইংরেজির উত্তর করতাম। এরপরে বাকি সময়ে যেগুলো পারতাম না সেগুলো নিয়ে ভাবতাম এবং চেষ্টা করতাম সব গুলোই উত্তর করে আসার। আমি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পরীক্ষা শেষ করে ফেলতে পারতাম।
নতুন ভর্তি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তামিমের পরামর্শ, কলেজে পড়াকালীন সময় থেকেই নিয়মিত প্রশ্নব্যাংক ও বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে হতাশ না হয়ে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।