বিক্রি নিষিদ্ধ সরকারি ওষুধ নিয়ে রামেক ছাত্রদলের মেডিকেল ক্যাম্প, তদন্তে কমিটি

ছাত্রদলের মেডিকেল ক্যাম্পে সরকারি ওষুধ (গোল চিহ্নিত)
ছাত্রদলের মেডিকেল ক্যাম্পে সরকারি ওষুধ (গোল চিহ্নিত) © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

সরকারি হাসপাতালে রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া সরকারি ওষুধ নিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার দিন এই মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে সংগঠনটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ কার্যক্রমের ছবিতে সরকারি ওষুধ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিক্রি নিষিদ্ধ এসব ওষুধ কিভাবে ছাত্রদল নেতাদের হাতে গেল, কারা সাপ্লাই দিয়েছে তা যাচাইয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের একমাত্র সরকারি ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) বর্তমানে প্রায় ১৪০টি আইটেমের ওষুধ তৈরি করে। প্রতিবছর দেশের সরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চাহিদার প্রায় ৭২ শতাশ ওষুধ সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। সরকার এখানে বিনিয়োগ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে জনসাধারণকে বিনামূল্যে সরবরাহ করার জন্য। এসব ওষুধ বাইরে বিক্রি নিষিদ্ধ।

ঔষধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩ এর ৪০ ধারায় সরকারি ওষুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ৪০(ক) ধারা অনুযায়ী আইনের তপশিলে বলা হয়েছে,  সরকারি ওষুধ বিক্রি অথবা বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত বা প্রদর্শন করলে অনূর্ধ্ব ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, সরকারি ওষুধ শুধুমাত্র সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বিতরণ করতে পারে। তবে কারো কাছে বিক্রি করা যায় না। কোনো সংস্থা এসব ওষুধ রোগীদের মাঝে বিতরণ করতে হলে সেটি অনুমতি নিতে হয়। তবে রাজনৈতিক সংগঠনের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব নয়। ফলে ছাত্রদলের কাছে কিভাবে এই সরকারি ওষুধ পৌঁছাল তা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

সরকারি ওষুধ দিয়ে মেডিকেল ক্যাম্পের অভিযোগ স্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রদল সভাপতি ডা. আমরি মিম। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে এভাবে সরকারি ওষুধ ব্যবহার করা যাবে বলে জানান তিনি। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি। অন্যদের অভিযোগের বিষয়ে ‘ধৈর্য্য ধারণ করছি’ বলেও উল্লেখ করেন ছাত্রদল সভাপতি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সাল আলম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি ওষুধ মেডিকেল কলেজ দেয় না, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেয়। তবে বিষয়টি সম্পর্কে আমি জেনেছি। এটা হওয়া উচিত না।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোনো সংগঠন বা সংস্থার পক্ষে এভাবে সরকারি ওষুধ নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, একেবারেই নাই। এ ধরনের কোনো সুযোগ নাই। তা ছাড়া কোনো আবেদনও আসেনি আমাদের কাছে। এজন্য আমরা তদন্ত করে দেখব ওষুধ আমাদের এখান থেকে নেওয়া হয়েছে কিনা। বিষয়টা আমি খুঁজে বের করার জন্য বলেছি।