গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন: টেকসই খাদ্য নিরাপত্তায় বৈশ্বিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

 গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন © টিডিসি ফোটো

টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বৈশ্বিক গবেষণা, অভিজ্ঞতা ও উদ্ভাবনের সমন্বয় ঘটাতে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী ‘রিজেনারেটিভ এগ্রিকালচার ফর সাসটেইনেবল ফুড সিকিউরিটি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন হয়েছে। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য—রিজেনারেটিভ কৃষিব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগিতার মাধ্যমে ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপ তৈরি।

শুক্রবার সকালে বেগম সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উদ্বোধনী ও প্রথম দিনের টেকনিক্যাল সেশন ছিল এক উৎসবমুখর আঙ্গিকের জ্ঞান–মিলনমেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস–চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান সভাপতিত্ব করেন উদ্বোধনী সেশনে। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সুইজারল্যান্ডের এগ্রোস্কোপের প্রধান ড. স্টিফেন মান।

পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, সুইজারল্যান্ড, নাইজেরিয়া সহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষকর্তা ও গবেষকদের অংশগ্রহণে প্রায় ১,২০০ নিবন্ধিত গবেষকের সমাগমে গাকৃবি ক্যাম্পাস পরিণত হয় এক আন্তর্জাতিক জ্ঞানমেলায়।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। পরে অর্গানাইজিং কমিটির কনভেনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সফিউল ইসলাম আফরাদ উষ্ণ স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। উদ্বোধনী পর্বে উন্মোচন করা হয় সম্মেলনের অ্যাবস্ট্রাক্ট বই, যেখানে বহুমাত্রিক গবেষণা, উদ্ভাবনী ধারণা ও সমসাময়িক কৃষিবিষয়ক চিন্তার সমৃদ্ধ সংকলন তুলে ধরা হয়েছে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটি অব ভাওয়ালপুরের বিশিষ্ট গবেষক প্রফেসর ড. ওয়াজিদ নাসিম যাতই। তিনি রিজেনারেটিভ কৃষি, মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার এবং জলবায়ু–সহনশীল খাদ্যব্যবস্থা গঠনে আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেন। পরে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি তাঁদের বক্তব্যে বিজ্ঞানচর্চা, উদ্ভাবন, তথ্য বিনিময় এবং দেশ–বিদেশের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগকে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে ভাইস–চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মাটিকে বাঁচানো, কৃষিকে পুনরুজ্জীবিত করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। এই সম্মেলন শুধু জ্ঞান বিনিময় নয়, বরং বৈশ্বিক সহযোগিতার শক্তিশালী সেতুবন্ধন।’

এরপর প্রফেসর ড. ওয়াজিদ নাসিম যাতই পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছাদূত হিসেবে উপস্থিত অতিথিদের স্মারক চাদর পরিয়ে সম্মাননা প্রদান করেন। উদ্বোধনী পর্ব শেষে রিজেনারেটিভ কৃষিতে শিল্প–বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা ও পণ্যের পরিচিতিমূলক সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

দিনব্যাপী ১০টি থিমেটিক এরিয়ায় ১০টি করে অগ্রগামী গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। যেখানে আলোচনায় উঠে আসে—জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির স্বাস্থ্য, ডিজিটাল এগ্রিকালচার, রিজেনারেটিভ ফার্মিং, প্রিসিশন কৃষি, নীল অর্থনীতি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষিবান্ধব প্রযুক্তি ও খাদ্যব্যবস্থার স্থায়িত্বসহ সমসাময়িক বৈশ্বিক বিষয়াদি।

প্রথম দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস–চ্যান্সেলরের সৌজন্যে আয়োজিত গালা ডিনারের মধ্য দিয়ে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান। এ দিনও ১০টি থিমেটিক এরিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন, ওয়াল ফ্ল্যাশ, পোস্টার প্রেজেন্টেশন, রাপোর্টারের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হবে।

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন টেকসই খাদ্য নিরাপত্তায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে প্রশংসা অর্জন করেছে।