জুলাই আন্দোলন ও হাসিনার ফাঁসির বিপক্ষে অবস্থানসহ বিতর্ক যত কর্মকাণ্ড ঢাবি অধ্যাপক আ ক ম জামালের
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:০৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) গিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের আলোচিত শিক্ষক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন একই বিভাগের আওয়ামীপন্থী নীল দলের শিক্ষক অধ্যাপক জিনাত হুদা।
আওয়ামীপন্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন অধ্যাপনার চেয়ে সব সময় বির্তকিত কর্মকাণ্ডে আলোচিত ছিলেন। সর্বশেষ গত ১৭ নভেম্বর জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিলে তা প্রত্যাখ্যান করে এক বিবৃতি দেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী ‘১০০১ জন’ শিক্ষক। এই তালিকায় নাম ছিলেন আ ক ম জামাল উদ্দীনের।
আরও পড়ুন: ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিরোধীদের ‘আনফ্রেন্ড’ করছেন ঢাবি অধ্যাপক জামাল
জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়াসহ মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিলেন আ ক ম জামাল উদ্দীন। এরই জেরে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। বর্তমানে তিনিসহ বিভাগের ছয় শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাবি অধ্যাপক জামাল উদ্দীনকে বহিষ্কারের দাবি, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের আহ্বায়কও তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ক্যাম্পাসে আ ক ম জামাল উদ্দীন কখনো নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে, কখনো মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে পবিত্র কোরআন থেকে দলিল দিয়ে, কখনো সহকর্মীর গায়ে হাত তুলে, আবার কখনো শিক্ষক সমিতিকে বিতর্কিত করে নানা সময়ে বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য রেখে সমালোচনা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
এমনকি জুলাই মাসে কোটা আন্দোলন চলাকালে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধীদের ফেসবুক থেকে ‘আনফ্রেন্ড’ও করেছিলেন অধ্যাপক জামাল। ২০২৪ সালের ১২ জুলাই এক স্ট্যাটাসে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন লিখেছিলেন, ‘আপনার যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সমর্থন করেন না, তারা আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেন না। সবাইকে আনফ্রেন্ড করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: এজন্যই ঢাবি প্রক্টর তাকে লাথি মেরেছিলেন: নুর
এর আগে গত বছরের ২৭ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে দলিল তুলে ধরেন অধ্যাপক জামাল। অধিবেশনে শিক্ষক প্রতিনিধি থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্যের বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, পবিত্র কোরআনের সুরা আনফালে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, ‘যারা বিজিত বাহিনী হবে তারা দেশের সম্পদ, চাকরি, অর্থ ও ভূখণ্ডের ৮০ ভাগ, অর্থাৎ ৪ ভাগের নিয়ন্ত্রণ পাবে। আর বাকি একভাগ থাকবে দুস্থ এতিমদের জন্য।’ তার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয় এবং নেটিজেনদের সমালোচনায় পড়েন প্রফেসর জামাল।
২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ-সমর্থক শিক্ষকদের নীল দলের সভায় সহকর্মীদের আঘাতে আ ক ম জামাল উদ্দীন আহত হয়েছিলেন। সে সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ‘তৎকালীন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ও তাদের পক্ষের আরও দুই শিক্ষক এ হামলা করেছেন, আঘাতে তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরেছে।’
২০২৩ সালের ২২ মে নির্বাচন ছাড়াই তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জাতীয় সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সেই সময় ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা করোনার কারণ দেখিয়ে সরকারের মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। কারণ ওই সময় সংসদ, জনগণ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি। তবে নির্ধারিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা করোনার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দরকার নেই।
ঢাবির এই অধ্যাপক আরও বলেছিলেন, ‘সংসদের মেয়াদ আরও পাঁচ বছরের জন্য বৃদ্ধি করা যায়। অন্তত দুই বছর তো হতেই পারে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও নির্বাচন কমিশনসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’