গণঅধিকারে অস্থিরতা
বিএনপির ‘পূর্ণ আশীর্বাদে’ নির্বাচন করতে চান রাশেদ খাঁন, ভিন্ন চাওয়া অন্যদের
- টিডিসি রিপোর্ট
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৫০
গণঅধিকার পরিষদে ফের অস্থিরত চলছে। সদ্য পদত্যাগ করা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে দলে ভেড়ানা কিংবা না ভেড়ানো ও জাতীয় নির্বাচনে জোটে যাওয়া-না যাওয়া ইসুত্যে চলছে এই অস্থিরতা। এর মধ্যেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন দলটির উচ্চতর পরিষদের এক সদস্য। এতে দলের সাধারণ সম্পাদককে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও আবেদন করেছেন তিনি। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে দলের সভাপতি নুরুল হক নুর বরাবর দেওয়া এক লিখিত আবেদনে এ প্রস্তাব দেন জাহের।
অনাস্থা প্রস্তাবে আব্দুজ জাহের বলেন, গণঅধিকার পরিষদ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান দলীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছেন এবং দলের ভেতরে অন্য রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে, সংগঠনের ঐক্য বিনষ্ট করছে এবং গণঅধিকার পরিষদের মূল আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এতে তিনি আরও লেখেন, এই প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি যে, তার বর্তমান পদে বহাল থাকা সংগঠনের অখণ্ডতা, লক্ষ্য ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর হুমকিস্বরূপ। অতএব, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমি এই মর্মে প্রস্তাব করছি যে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের প্রতি অনাস্থা ঘোষণা করা হোক এবং তার পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
দলে গুঞ্জন— ট্রাকের প্রচারণা করেন না রাশেদ, নির্বাচন করতে চান ধানের শীষে
দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের ভেতরে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে গভীর মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের কোনো প্রচারণায় রাশেদ খাঁনকে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা যায়নি। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নির্বাচন উপলক্ষে দোয়া চেয়েছেন তিনি। দলে আলোচনা— বিএনপির ‘পূর্ণ আশীর্বাদ’ নিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান রাশেদ খাঁন। এজন্য তিনি এখনও নির্বাচনী প্রচারণায় নিজ দলের প্রতীককে ওইভাবে সামনে আনেননি।
এর আগে একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনের একটি বক্তব্য নিয়েও দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দলগুলো নির্বাচনী জোট করে জেতার জন্য। একটা জোটে একাধিক দল থাকে। জোট করার পর আলাদা আলাদা প্রতীকে নির্বাচন করলে প্রচার করা কঠিন। সেজন্য এই অধ্যাদেশ সংশোধন করে আগেরটাই বহাল করতে হবে।’ যদিও এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন দলটির সভাপতিসহ নেতাকর্মীরা।
এই ভিন্নমতের কারণে সাম্প্রতিক কয়েক মাস ধরে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ ও ধীরে ধীরে দৃশ্যমান বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এক পর্যায়ে রাশেদ খানকে দলীয় প্যাডে শোকজও করা হয়। সে সময় তার কাছে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও বিষয়টি পুরোপুরি মীমাংসিত হয়নি বলে জানা যায়। যদিও রাশেদ খান ওই শোকজ পত্রকে ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, মূলত তখনকার ওই বিষয়টি সুরাহা না হওয়ার জেরেই নতুন করে ইস্যুটি সামনে এলো।
দলের কয়েকটি সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছে, দুটি আসন নিশ্চিত পাওয়ার শর্তে দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বিএনপির সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছেন; যে দুটি আসনের বিষয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছে দলটি। আসিফ মাহমুদকে দলে ভেড়ানো গেলে এই সংখ্যা হয়তো তিনটি হবে। যদিও দলের হয়ে নির্বাচন করতে চাওয়া অধিকাংশ নেতার অবস্থান ভিন্ন। তারা গণঅধিকার পরিষদ নিজস্ব প্রতীক ‘ট্রাক’ মার্কা নিয়ে স্বাধীনভাবে একক নির্বাচন করতে চান।
তিনি (রাশেদ খাাঁন) ঝিনাইদহের একটি আসনে নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও সেখানে ট্রাক মার্কার প্রচারণা করেন না। তিনি চাচ্ছেন একটি দলের সাথে জোট করে ক্ষমতায় যেতে। যেখানে দলের সভাপতিসহ ঘোষিত ২০০ আসনের সব প্রার্থীরাই ট্রাক প্রতীকের গণসংযোগ করছেন। রাশেদ খান তার নির্বাচনী কার্যক্রমে দলের প্রতীকও ব্যবহার করছেন না।-আব্দুজ জাহের, গণঅধিকার নেতা
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সর্বোচ্চ ফোরাম উচ্চতর পরিষদের সদস্য আব্দুজ জাহের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন দলের স্বকীয়তা নষ্ট করে ব্যক্তিস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, টকশো-কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত, সাংগঠনিক কাজে অনুপস্থিত এবং একটি বিশেষ দলের তোষণ করতে গিয়ে অন্যান্য মিত্র দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন। এছাড়া তিনি (রাশেদ) ঝিনাইদহে নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও সেখানে ট্রাক মার্কার প্রচারণা করছেন না। তিনি চাচ্ছেন একটি দলের সাথে জোট করে একক ক্ষমতায় যেতে। যেখানে দলের সভাপতিসহ ঘোষিত ২০০ আসনের সব প্রার্থীরাই ট্রাক প্রতীকের গণসংযোগ করছেন। রাশেদ খান তার নির্বাচনী কার্যক্রমে দলের প্রতীক ব্যবহার করছেন না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির সহায়তা চিঠি, চীন সফরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাশেদ খান দলের সিদ্ধান্ত ও সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ অমান্য করেছেন। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন, দলীয় প্রতীক, আসন বণ্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি দলের ঘোষিত অবস্থানের বিপরীতে মত দিয়েছেন এবং আসন ঘোষণার প্রতিবারই ভেটো দিয়েছেন।
‘আমি দলের সাধারণ সম্পাদক কোথায়, কে, কী অভিযোগ করেছেন বা করেননি—এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’- রাশেদ খাাঁন, সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ
তিনি আরও জানান, রাশেদ খানের কারণে দলকে জাতীয় পার্টির মতো গৃহপালিত দলে পরিণত করার চেষ্টা চলছে এবং দলের ৯৮শতাংশ নেতাকর্মীর মতের বিপরীতে গিয়ে নিজের এমপি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে দলকে ‘বিক্রি’ করে দেওয়া হচ্ছে।
জাহের বলেন, ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে নয়, বরং দলের অস্তিত্ব, কোটি মানুষের প্রত্যাশা এবং সংগঠনকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই আমি রাশেদ খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এমন একটি অনাস্থা প্রস্তাব দলের একজন উচ্চতর পরিষদ সদস্য দিয়েছেন, আমরা বিষয়টি পরবর্তী দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি দলের সাধারণ সম্পাদক কোথায়, কে, কী অভিযোগ করেছেন বা করেননি—এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।
এ বিষয়ে জানতে দলের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।