কবর থেকে লাশ উত্তোলন, খুনিদের ফাঁসি চাইলেন মা

পটুয়াখালী মরদেহ উত্তোলন করেছে প্রশাসন
পটুয়াখালী মরদেহ উত্তোলন করেছে প্রশাসন © টিডিসি ফটো

পটুয়াখালী সদর উপজেলার ভুরিয়া ইউনিয়নের শৌলা এলাকায় ইমরান হত্যা মামলার পাঁচ মাস পরে মরদেহ উত্তোলন করেছে প্রশাসন। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে মরদেহ তোলার মুহূর্তে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত মো. ইমরানের মা মোসা. সাফিয়া বেগম।

এ সময় হাতে তসবি, চোখ ভর্তি পানি—কাঁপা গলায় তিনি বারবারই বলেন, ‘আপনাগো ধারে আমি বিচার চাই। সাংবাদিকদের কাছে, সেনাবাহিনীর কাছে, ডাক্তার ইউনুসের কাছে আমার ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই। আমার দুইটা ছেলে, একটা মেয়ে… সবাই আমার চোখের মনি ছিল। ঠিকাদারির ব্যবসায় টান পড়ায় আমার পোলা চিন্তায় ছিল। মোটরসাইকেল বিক্রির কথা বলে ডাইকা নিয়ে গেছে। তারপর আর বাড়ি ফেরত আসে নাই। আমার টাকা নাই, শক্তি নাই… আল্লাহর দিকে তাকাইয়া আছি বিচার পাবার আশায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১০টার দিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ভুরিয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে মো. ইমরানকে হত্যা করা হয়। তিনি একই উপজেলার বুতলবুনিয়া গ্রামের মো. সহিদ সিকদারের ছেলে। ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর পরিবার পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করে, যা পরে আদালতে নালিশি দরখাস্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

আদালতের নির্দেশে সোমবার বিকেলে জেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরীর উপস্থিতিতে ইমরানের মরদেহ কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পটুয়াখালী মর্গে পাঠানো হয়।

পরিবারের অভিযোগ, একই গ্রামের হিরণ আকন মোটরসাইকেল বিক্রির কথা বলে ইমরানকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। সঙ্গে ছিলেন জাকির মৃধা ও শামীম হোসেন (মোনাসেফ)। জমি-সংক্রান্ত বিরোধ এবং আগের একটি মামলায় ইমরান বাদী থাকায় আসামিরা ক্ষুব্ধ ছিল। সেই আক্রোশ থেকেই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।

নিহতের বাবা মো. সহিদ সিকদার বলেন, ‘আমার জীবনের মানিক হারাইছি। সরকারের কাছে আমার ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই। এতদিনেও কাউকে আটক করা হয়নি। হিরণ, নাজমুল, মনাসেফসহ সাতজনের বিচার চাই।’

ইমরানের বোন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ভাইরে যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই। মামলা করার পরও তারা ধরা পড়ে নাই। উল্টো হিরণ বাড়িতে এসে মামলা তুলতে বলে, হুমকি দেয়। বলে—সব খরচ দেবে, এমনকি আমার বিয়ের খরচও। যদি তারা নির্দোষ হতো তাহলে তদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করত। এখন বিভিন্ন লোক দিয়ে আমাদের উপর চাপ দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে।’

এ বিষয়ে জেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, ‘এটি নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন থেকে সুরতহাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়—আমি শুধু সেটাই নিশ্চিত করেছি।’