আবাসিক স্কুল চ্যাম্পিয়ন একাডেমি

শুধু ভালো ছাত্র নয়, ভালো মানুষ তৈরিই যাদের মূল লক্ষ্য

চ্যাম্পিয়ন একাডেমি লোগো
চ্যাম্পিয়ন একাডেমি লোগো © সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ছেলেদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘চ্যাম্পিয়ন একাডেমি’। বুয়েট থেকে পাস করে পরবর্তীতে মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা একদল স্বপ্নবাজ মানুষের উদ্যোগে ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই একাডেমি। এখানে পড়ালেখার পাশাপাশি চরিত্র গঠন, নৈতিক শিক্ষা, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তিচর্চা—সবকিছুই একই ছাদের নিচে অত্যন্ত যত্ন ও শৃঙ্খলার সঙ্গে পরিচালিত হয়। এছাড়া দরিদ্র-এতিম ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থা। 

চ্যাম্পিয়ন একাডেমিতে অধ্যয়নরত ছাত্রদের একাংশ

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. আহসান হাবীব বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা এমনভাবে তৈরি করি, যেন তারা নিজ নিজ অ্যাকাডেমিক ও প্রফেশনাল ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি মানুষ হিসেবেও চ্যাম্পিয়ন হয়। আগামী বছরের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হবে।

দরিদ্র–এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০% বৃত্তি
চ্যাম্পিয়ন অ্যাকাডেমিতে যাকাতযোগ্য বা ইয়াতিম শিক্ষার্থীদের শতভাগ বৃত্তি প্রদান করা হয়। এই বৃত্তির আওতায় রয়েছে আবাসন, খাদ্য, পড়াশোনা, মানসিক স্বাস্থ্য, পোশাক-পরিচর্যা, বইপত্রসহ অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী। 

চ্যাম্পিয়ন একাডেমির ছাত্ররা অংশ নিয়েছে বিজ্ঞান উৎসবে

এখানে শিক্ষা মানে শুধু বই নয়, মানুষ গড়া
চ্যাম্পিয়ন একাডেমিতে জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী নিয়মিত ক্লাস হয়। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কুরআন-হাদীস ও নৈতিকতার পাঠ, চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণ, আচরণগত শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য মূল্যবোধ তৈরির কর্মকৌশল শেখানো হয়। প্রতিটি বালকের আগ্রহ অনুযায়ী তাদের যুক্ত করা হয় বিজ্ঞান ক্লাব, রোবটিক্স, প্রোগ্রামিং ল্যাব, বিতর্ক, লেখালেখি, ক্যালিগ্রাফি, চিত্রাঙ্কন বা সংগীতচর্চায়। যে শিশুটি বিজ্ঞানে মেধাবী, সে সেখানে এগিয়ে যায়; যে ভাষা বা শিল্পচর্চায় আগ্রহী, তার জন্যও থাকে সুনির্দিষ্ট সুযোগ। এভাবে প্রতিটি শিশুর লুকায়িত প্রতিভাকে যত্নে লালন করা হয় এবং ধীরে ধীরে তাকে আত্মবিশ্বাসী, দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

নৈতিক ভিত্তি শক্ত করার প্রয়াসে চ্যাম্পিয়ন একাডেমির ছাত্ররা

প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক কোঅর্ডিনেটর শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাচ্চারা আসে। তাদের যেন একাকীত্ব না লাগে, সে জন্য শিক্ষকরা সারাক্ষণ তাদের পাশে থাকেন। তারা কেউ ছবি আঁকে, কেউ কোডিং শেখে, কেউ বাগান করে। আমরা প্রতিটি কাজেই তাদের সহায়তা করি। প্রতিটি ছাত্র নিয়মিত তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এখানে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক তদারকি করা হয় দক্ষ শিক্ষক ও ওয়ার্ডেনদের মাধ্যমে। যেহেতু দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিশুরা এখানে একসঙ্গে থাকে, তাই তারা যেন একাকীত্ব বা মানসিক চাপ অনুভব না করে, সেটাই নিশ্চিত করা হয়। তারা কেউ আঁকতে ভালোবাসে, কেউ কোডিং শেখে, কেউ বাগান করে। শিক্ষকেরা প্রতিটি শিশুর আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে পাশে থাকেন। প্রতিটি শিশুর নিয়মিত ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে আবেগিক সংযোগ অটুট থাকে। খাবারের মান, ঘুম, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতা—এসবের ওপরও প্রতিদিন নজর রাখা হয় অত্যন্ত মনোযোগসহকারে।

বিজ্ঞানাগারে হাতে কলমে শিখছে চ্যাম্পিয়ন একাডেমির ছাত্ররা

চ্যাম্পিয়ন একাডেমির বিশেষ মূল্যায়ন পদ্ধতি:
চ্যাম্পিয়ন একাডেমির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো একটি আধুনিক, গবেষণাভিত্তিক অ্যাসেসমেন্ট ব্যবস্থা। একাডেমিটি বাংলাদেশের যেকোনো স্কুলের তুলনায় আরও উন্নত, গবেষণাভিত্তিক মূল্যায়ন কাঠামো অনুসরণ করে। প্রতি শিক্ষার্থীর অগ্রগতি মাপা হয় ১০টি মূল সূচকে। এখানে কোনো শিক্ষার্থীর অগ্রগতি কেবল তার পরীক্ষার নম্বর দিয়ে বিচার করা হয় না; বরং পড়াশোনা, নৈতিকতা, শারীরিক স্বাস্থ্য, অভ্যাস, আচরণ, নেতৃত্ব, প্রযুক্তিজ্ঞান, বৈশ্বিক সচেতনতা—এসব মিলিয়ে তার সামগ্রিক বিকাশ মূল্যায়ন করা হয়। কুরআন শিক্ষায় রয়েছে ধাপে ধাপে অগ্রগতির কাঠামো—হরফ চেনা থেকে শুরু করে তাজবীদ, মুখস্থ, অর্থ বোঝা, এমনকি দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ পর্যন্ত। সালাহ, রমজান, হাদীস, ইসলামি মূল্যবোধ—এসব ক্ষেত্রেও শিশুদের অনুশীলন ও উন্নতি রেকর্ড করা হয়। শারীরিক স্বাস্থ্য মূল্যায়নে ব্যবহৃত হয় বিপ টেস্ট, দৌড়, সাঁতার, পুশ-আপ, উচ্চতা-ওজনের WHO গ্রোথ চার্টসহ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।

চ্যাম্পিয়ন একাডেমির ছাত্ররা শিক্ষাভ্রমণে নভোথিয়েটারে

অভিভাবকদের জন্য নিশ্চিন্ত থাকার মতো আবাসিক মানদণ্ড
দৈনন্দিন আচরণ, দায়িত্ববোধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রিসোর্স ব্যবহার, পারমিশন কালচার ইত্যাদি ক্ষেত্রেও শিশুদের নৈতিক ও সামাজিক বিকাশ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারা নিজেরা রুম পরিষ্কার করা, সিঁড়ি ও লাইব্রেরি পরিপাটি রাখা, বাগান সংস্কার, কমিউনিটি সার্ভিসসহ বিভিন্ন কাজে অংশ নেয় নিয়মিত। প্রযুক্তি জ্ঞান, রোবটিক্স, STEM প্রজেক্ট, প্রতিযোগিতা—এসব ক্ষেত্রেও চ্যাম্পিয়ন একাডেমির শিক্ষার্থীরা স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নেয়। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক, যাতে শিশুরা আত্মবিশ্বাস ও উপস্থাপন দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

শুধু ভালো ছাত্র নয়, ভালো মানুষ তৈরি করাই মূল লক্ষ্য
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. আহসান হাবীব জানান, তাদের লক্ষ্য একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে একটি শিশু একদিকে যেমন একাডেমিকভাবে চৌকস হয়ে ওঠে, তেমনি নৈতিক আচরণ, দায়িত্ববোধ, নেতৃত্বগুণ, এবং শারীরিক–মানসিক সুস্থতায়ও সমানভাবে উন্নতি করে। 

চ্যাম্পিয়ন একাডেমির পরীক্ষার হলের চিত্র

ভাইস প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান বলেন, এখানে আইইউটি, এমআইএসটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগরসহ শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশকরা মেধাবীরা শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন। এসকল দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা শুধু ক্লাস নেন না; তারা প্রতিটি শিক্ষার্থীর অভ্যাস, আচরণ, স্বাস্থ্য, মনস্তত্ত্ব—সবকিছুর ওপর নিবিড়ভাবে কাজ করেন। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়ে। চ্যাম্পিয়ন একাডেমি—আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎকে একটি নিরাপদ, উজ্জ্বল পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত।

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি চলছে
চ্যাম্পিয়ন একাডেমির ভর্তি জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়, যেখানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষার্থী নেওয়া হয়। যারা নিজেদের ছেলের জন্য একটি নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, নৈতিক ও আধুনিক শিক্ষা পরিবেশ খুঁজছেন—তাদের জন্য চ্যাম্পিয়ন একাডেমি সত্যিই একটি অনন্য বিকল্প। এখানে এসে ছেলেরা শুধু ভালো ছাত্রই হয় না—তারা হয়ে ওঠে ভালো মানুষ, ভালো নাগরিক এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রস্তুত।

স্কুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন
মোবাইল: ০১৮৮৬৩৮২৬৮৮
ফেসবুক পেইজ: www.facebook.com/championacademybd/ 
ওয়েবসাইট: https://championacademybd.org/

মেন্টাল ওয়েলবিং সেশন শেষে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের একাংশ