আজ দুজনসহ ছয় দিনে ৫ বাংলাদেশিকে হত্যা বিএসএফের

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ © সংগৃহীত

গুলি ও পিটিয়ে গত ছয় দিনে ৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এর মধ্যে তিনজনকে গুলি করে হত্যা ও দু’জনকে পিটিয়ে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) লালমনিরহাটের পাটগ্রাম এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে।

আজ ভোরে পাটগ্রামের জগতবেড় ইউনিয়নের শমসেরনগর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন সবুজ মিয়া (৩০)। তিনি জগতবেড় ইউনিয়নের পচাভান্ডার গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোরে তিস্তা ব্যাটালিয়ন-৬১ বিজিবির অধীনস্থ শমশেরনগর সীমান্তের মেইন পিলার ৮৬৪/৫ এর বিপরীতে ভারতের অভ্যন্তরে কেনাকাটা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, সীমান্তে এমন একটি ঘটনার খবর পেয়েছি। তবে বিজিবি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। শুনেছি এ ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

পরে দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে শুকুরাম উরাং (২৫) নামে এক যুবক নিহত হন। নিহত যুবক মুরইছড়া চা বাগান বস্তি এলাকার বাসিন্দা দাসনু উরাংয়ের ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ১৫-২০ দিন আগে তিনি বাড়িতে ছুটিতে এসে পরিবারের সদস্যদের কৃষিকাজে সহযোগিতা করছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, শুকুরাম উরাং দুপুরে সীমান্তবর্তী ১৮৪৪ নম্বর পিলারের পাশে তাদের কৃষিজমিতে কাজ করতে যান। এসময় তিনি তার গৃহপালিত পশুকে খেতের মধ্যে ঘাস খাওয়াচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর দুপুর দেড়টার দিকে ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। পরে তিনি দৌড়ে কিছুদূর এগিয়ে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, শুকুরাম উরাংয়ের লাশ কুলাউড়া সদর হাসপাতালে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এর আগে গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে শহীদ হোসেন (৩৮) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হন। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সীমান্তের ৭০ নম্বর প্রধান খুঁটি (মেইন পিলার) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শহীদ হোসেনের বাড়ি উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামে।

জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গয়েশপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, শহীদ হোসেন মূলত কৃষিশ্রমিক। অন্যান্য দিনের মতো আজ সকালে সীমান্তবর্তী এলাকার একটি ভুট্টাখেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিএসএফের গুলিতে তিনি মারা যান।

স্থানীয় একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, শহীদ হোসেন ভুট্টাখেত থেকে কাটা বস্তাভর্তি ঘাস নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বস্তার ভেতরে মাদক আছে সন্দেহে বিএসএফ গুলি ছুড়লে শহীদ হোসেন মারা যান। এরপর তারা (বিএসএফ) তার মরদেহ ভারতের অভ্যন্তরে একটি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়।

পরদিন রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাত ২টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ওয়াহেদপুর বিওপি এলাকায় দুই বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যা করে বিএসএফ। আন্তর্জাতিক পিলার ৭৬ ও ৭৭ নম্বরের মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। পরে নিহতদের লাশ পদ্মা নদীতে ফেলে দেয় 
নিহতরা হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের গাইপাড়া গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রিংকু (২৮) এবং পাঁকা ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে মমিন মিয়া (২৯)।