সন্তানহারা মা কুকুর টম পেল নতুন দুই সন্তান

পরম মমতায় ছানাকে দুধ পান করাচ্ছে মা কুকুর
পরম মমতায় ছানাকে দুধ পান করাচ্ছে মা কুকুর © টিডিসি ছবি

আটটি সন্তান হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মা কুকুর টম। খাওয়া-দাওয়া ভুলে উপজেলা পরিষদের আশেপাশে খুঁজে ফিরছিল নিজের সন্তানদের। কষ্ট যন্ত্রণায় ভারী হয়ে যাচ্ছিল তার বুক। দুধ সেবন করা ছানাগুলো না থাকায় স্তন ফুলে সেই যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিচ্ছিল অনেকগুণ।

তবে আট সন্তান হারালেও, ফিরে পেল তার নতুন দুই সন্তান। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কিছুটা হলেও লাঘব করতে তার কাছে এনে দেওয়া হয়েছে দু’টি কুকুরছানা। অন্য একটি কুকুরের জন্ম দেওয়া কয়েকটি বাচ্চা থেকে দু’টি সংগ্রহ করা হয়েছে টমের জন্য। দু’টি ছানা পেয়ে স্বস্তির চিহ্ন দেখা গেছে মা কুকুরটির চোখে-মুখে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে মা কুকুরের যন্ত্রণার কথা চিন্তা করে কুকুরছানা দু’টি সংগ্রহ করেন সামাজিক সংগঠন ঈশ্বরদীয়ানের মুখপাত্র শাহরিয়ার অমিত ও তার বন্ধুরা। পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছানা দু’টি মা কুকুর টমের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাথে সাথে ছানা দু’টি মা কুকুর টমের দুধ সেবন শুরু করে। মুহুর্তেই যেন ছানা দু’টিকে আপন করে নেয় সে।

এ সময় সেখানে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত ছিলেন।

সামাজিক সংগঠন ঈশ্বরদীয়ান মুখপাত্র শাহরিয়ার অমিত বলেন, ‌মা কুকুর টমকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। বাচ্চা না থাকায় তার বুক ফুলে ভারী হয়ে যাচ্ছিল। মানুষ হিসেবে একটা প্রাণীর যন্ত্রণা অনুভব করে মনে হল কিছু একটা করা দরকার। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করলে তিনি পরামর্শ দেন অন্য একটা কুকুরের অনেকগুলো ছানা থেকে দু’টি ছানা এনে মা কুকুর টমকে দেওয়া যায়। তার সেই পরামর্শে আমি আমার পোষা কুকুরের কাছ থেকে দু’টি বাচ্চা এনে সন্তানহারা মা কুকুরটিকে দেই, যাতে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কিছুটা হলেও ভুলতে পারে। মাতৃত্বের স্বাদ কিছুটা মিটতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মা কুকুরটি যখন আমার কার্যালয়ের সামনে আসে, তখন আমার খুব খারাপ লাগছিল। সারাদিন উপজেলা চত্বরে ঘোরাঘুরি করছে, সন্তানদের খুঁজে বেড়াচ্ছে- এমন চিত্র দেখে ভাবলাম তার জন্য অন্য কুকুরের দু’টি বাচ্চা এনে দিলে মন্দ হয় না। সেই চিন্তা থেকে ঈশ্বরদীয়ানের শাহরিয়ার অমিতকে আমার চিন্তা জানাই। তখন সে তার পোষা কুকুরের দু’টি বাচ্চা নিয়ে এসে মা কুকুরকে দেয়। তখন মা কুকুরের চোখে মুখে অনেকটা স্বস্তি দেখেছি। বাচ্চা দু’টিকে সে তাৎক্ষনিক আপন করে নিয়েছে দেখে নিজেদেরও মনে কিছুটা স্বস্তি লাগছে।