মিরসরাইয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতি © টিডিসি

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নে দেশব্যাপী কেন্দ্র-ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আজ বুধবার অর্ধদিবস (সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা) কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। ন্যায়সংগত দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঘোষিত এ কর্মসূচিতে জেলা সদর হাসপাতালসহ সব উপজেলা ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্মরত টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা অংশ নিয়েছেন।

দীর্ঘ তিন দশকের বৈষম্য, অবহেলা, প্রশাসনিক উদাসীনতা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিরুদ্ধে একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ অর্ধদিবস কর্মবিরতি চলছে।

পেশাজীবীরা বলেন, ‘কর্মসূচী চলাকালীন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের যে সাময়িক অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছে, তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু আমরা এই আন্দোলনে অবমূল্যায়ন থামাতে, পেশাজীবীদের নায্য অধিকার নিশ্চিত করতে।’

স্বাস্থ্যখাত কেবল ডাক্তার-নার্সের ওপর দাঁড়ানো নয়; স্বাস্থ্য খাত একটি ত্রিমাত্রিক সুসংগঠিত টিম ডাক্তার, নার্স এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা মিলে এই স্বাস্থ্যসেবা টিকে থাকে, এগিয়ে যায়।

পেশাজীবীদের দাবি সমমানের যোগ্যতার সব ডিপ্লোমা পেশাজীবীরা বহু আগেই দশম গ্রেড পেয়েছেন। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা ১৯৯৪ সালে, নার্সরা ২০১১ সালে, কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা ২০১৮ সালে। কিন্তু একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা আজও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত।

কর্মসূচী চলাকালীন প্যাথলজি, রেডিওলজি, ডেন্টাল, ফার্মেসী ও ফিজিওথেরাপি সেবা মারাত্নকভাবে বিঘ্নিত হয়। লম্বা সারিতে রোগীরা এসব সেবা নেয়ার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। কর্মসূচির কারণে কিছু ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেবায় মারত্নক বিঘ্ন ঘটে।

অংশগ্রহণকারীরা জানান, গত এক বছর ধরে আবেদন, স্মারকলিপি, বৈঠক, যুক্তি–তথ্য–পরিসংখ্যানসহ সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেও তাদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে। মাত্র বছরে ২৪ কোটি টাকার আর্থিক বরাদ্দে দীর্ঘ তিন দশকের পেশাগত অর্জনকে মর্যাদায় উন্নীত করা—এ দাবি তাদের মতে ন্যায়সংগত ও সময়োপযোগী।

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অভিমত, দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি স্তরে ইউনিয়ন পর্যায়ের ছোট কেন্দ্র থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল পর্যন্ত তাদের কর্মযজ্ঞ  চিকিৎসাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবু রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বৈষম্য তাদের বাধ্য করেছে কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচিতে সামিল হতে।

কর্মসূচিস্থলে উপস্থিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা কখনোই সেবা বন্ধ রাখতে চাইনি তবে আমাদের প্রতি অবহেলা ও উদাসীনতার সীমা অতিক্রম করায় আমরা বাধ্য হয়েছি।’

আন্দোলনকারী পেশাজীবী প্রতিনিধি উত্তম কুমার বলেন, ‘আমরা যে পদে চাকরি শুরু করি, ৩০ বছর পরও সেই একই পদে অবসর নিই এটি বৈষম্যের চরম রূপ। আমরা ইতিমধ্যে সরকারকে ৯৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। ৩০ নভেম্বর সারাদেশে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছি, ১ ও ২ ডিসেম্বর আবারো ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। কিন্তু তবুও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। মনে হচ্ছে এসবকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।’

ফার্মাসিস্ট ফটিক রায় বলেন, ‘আমাদের মর্যাদা যখন বারবার পদদলিত হচ্ছে, আমাদের যোগ্যতা যখন অবমূল্যায়িত হচ্ছে তখন আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকে না।’

দেলশাদ মিয়া বলেন, ‘দশম গ্রেড কোনো আবদার নয়, এটি আমাদের অধিকার। এটি ন্যায়বিচার, এটি মর্যাদা, এটি সম্মান। শুধু প্রজ্ঞাপনই আমাদের ফিরিয়ে আনতে পারে।’

সরকার যদি আজই প্রজ্ঞাপন দেয়, ‘এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় কমিটি কর্মসূচি প্রত্যাহার করবে, আমরা আবার রোগীর সেবায় ফিরে যাব।’