যুবশক্তির সেই দুই নেতাকে সাময়িক অব্যাহতি
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৭
রাজশাহী পর্যটন মোটেলের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকির ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) মধ্য রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দুই নেতা হলেন, যুবশক্তির রাজশাহী মহানগর শাখার মূখ্য সংগঠক মো. মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম সদস্য সচিব সোয়াইব আহমেদ।
সাংগঠনিক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুরুতর সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় যুবশক্তির রাজশাহী মহানগর শাখার মূখ্য সংগঠক মো. মেহেদী হাসান এবং যুগ্ম সদস্য সচিব সোয়াইব আহমেদকে কমিটির সব দায়িত্ব হতে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
একইসঙ্গে, শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কর্মকাণ্ডের দায়ে তাদের কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না—সে বিষয়ে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত এবং সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আহবায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম নির্দেশ দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান না করা হলে, সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, রাজশাহী পর্যটন মোটেলের সম্মেলন কক্ষ থেকে সোয়াইব আহমেদ সাংবাদিকদের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ না করলে তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দেন। এ সময় সাংবাদিকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি পরে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী জেলা কমিটির পরিচিতি সভায় এ ঘটনা ঘটে।
গত শনিবার এনসিপির রাজশাহী জেলা আহয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একদিন পরে পাঁচ সদস্য পদত্যাগ করেন। রবিবার রাতে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা সংবাদ সম্মেলন করে নতুন আহবায়ক সাইফুল ইসলামকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেন।
এ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার বিকেলে পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়। সভা শুরুর আগে কমিটির আরও পাঁচজন সদস্য মোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে জেলা আহবায়ক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সাংবাদিকরা তখন সাইফুল ইসলামের বক্তব্য নিতে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং কেউ কেউ সরাসরি সম্প্রচার শুরু করেন।
ঠিক সেই সময় সোয়াইব আহমেদ আরেকজনকে নিয়ে সভাকক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, এখনই সাংবাদিকরা বেরিয়ে যান, না হলে সবাইকে তালা মেরে দেওয়া হবে। তিনি আরও কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
আরও পড়ুন: ম্যানেজিং কমিটি থেকে রাজনীতিবিদরা ‘আউট’, সরকারি কর্মকর্তাদের ‘ইন’ শুরু
সাংবাদিকরা সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্র প্রতিবাদ জানালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সোয়েব আহমেদ দ্রুত সভাকক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে যান। সাংবাদিকরা তার পেছনে গিয়ে তাকে ঘিরে ধরে হুমকির প্রতিবাদ জানালে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। চাপের মুখে সোয়েব আহমেদ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এর আগে পরিচিতি সভা চলাকালে সোয়েবসহ কয়েকজন ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে মোটেলের ভেতরে প্রবেশ করেন। এতে মোটেলের কর্মীরা ভেতরে ৫৩ জন অতিথি থাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে বলে তাদের বাইরে গিয়ে স্লোগান চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
এনসিপির মহানগর আহবায়ক মোবাশ্বের আলী জানান, ছেলেটা আমাদের সঙ্গে চলে, কিন্তু দলের কোনো পদে নেই। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। বয়স কম, তাই এমন কথা বলে ফেলেছে। আসলে জেলার আহবায়ক সাইফুলকে নিয়ে তাদের ক্ষোভ আছে।
আওয়ামী সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রসঙ্গে এনসিপির জেলা আহবায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কোনো আওয়ামী সম্পৃক্ততা নেই। আগে আমি জিয়া পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। পরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হই। এরপর এনসিপিতে এসেছি।’