আইইউবিতে সাইমা হলের ১০ বছর উদযাপন
- ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৪৪
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) সাইমা হলের ১০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। দেশের দূরবর্তী অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে আবাসন, খাবার এবং উচ্চমানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে এক দশক আগে প্রতিষ্ঠিত এই আবাসিক সুবিধাটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ও একমাত্র পূর্ণ–অনুদানভিত্তিক নারী হোস্টেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) আইইউবির বসুন্ধরা ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মাইলফলক উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে সাইমা হলের বর্তমান শিক্ষার্থীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
২০১৫ সালে মাত্র আট শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা সাইমা হলের আবাসিক কক্ষগুলো জে ব্লক, বারিধারায় অবস্থিত নয়তলা ভবনের ওপরের পাঁচটি তলায় অবস্থিত। ভবনটি আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এ মতিন চৌধুরীর পরিবারের মালিকানাধীন। গত ১০ বছরে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে।
হলটির অর্থায়ন করে শাহীদ খালেক ও মেজর সালেক বীর উত্তম ট্রাস্ট, যা এ মতিন চৌধুরীর পরিবারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। আইইউবি ট্রাস্টি সালমা করিম হলটির সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করেন, যেখানে তার নির্দেশনায় কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ট্রাস্টি এ মতিন চৌধুরী, ট্রাস্টি সালমা করিম, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান দিদার এ. হুসাইন, ট্রাস্টি তৌহিদ সামাদ, ট্রাস্টি ওয়াজেদ আলী খান পান্নী, ট্রাস্টি রাশেদ চৌধুরী, উপাচার্য প্রফেসর এম তামীম এবং প্রো–ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড্যানিয়েল ডব্লিউ. লুন্ড। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি মোহাম্মদ তানভীর মাদার এবং ট্রাস্টি ড. হুসনে আরা আলী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাইমা হলের শিক্ষার্থীরা আইইউবিতে ১০০ শতাংশ স্কলারশিপে পড়াশোনা করেন। তাদের আবাসন, খাবার ও আসবাবপত্রের ব্যয় বহন করে ট্রাস্ট, আর বিশ্ববিদ্যালয় বহন করে সব ধরনের ইউটিলিটি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ—যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ইন্টারনেট ও পরিচর্যা।
গত দশকে প্রায় ৭০ জন সুবিধাবঞ্চিত নারী শিক্ষার্থী সাইমা হলে থেকে আইইউবিতে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন। এরা দেশের প্রত্যন্ত ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে ব্যাংকিং, তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে দেশে–বিদেশে কর্মরত। বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, জার্মানি, জাপান ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
আইইউবির ২৫তম সমাবর্তনে স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী পুরস্কারপ্রাপ্ত অ্যালুমনা আতিকা হুমায়রা বলেন, ‘সাইমা হল শুধু আবাসন নয়, এটি একটি পরিবার। একটি নিরাপদ স্থান, যেখানে শিক্ষার্থীরা সীমাহীনভাবে বেড়ে উঠতে পারে।’
গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্ন্যান্স বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী সাইমা বিনতে রশিদ বলেন, ‘অন্যান্য জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য সাইমা হল একটি বিশেষ সুযোগ। এখানে নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং এমন সুবিধা রয়েছে যা পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়তা করে।’
ট্রাস্টি এ মতিন চৌধুরী জানান, ভবনের বাকি তলাগুলোতেও সাইমা হল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে আরও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা সবাই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছ। যেখান থেকে এসেছ সেই এলাকার মানুষদের ভুলে যেও না, তাদের প্রতি তোমাদের দায়িত্ব রয়েছে।’
বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান দিদার এ. হুসাইন বলেন, ‘সাইমা হল আমাদের গৌরবের প্রতীক। এখানে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জীবন গড়ার সুযোগ দিতে পারছি। যেখানে যেভাবেই থাকো, অন্যকে সাহায্য করবে—এটাই মানবিকতার ভিত্তি।’
ট্রাস্টি সালমা করিম বলেন, ‘আমরা আজ শুধু সময়ের একটি মাইলফলক নয়, বরং একটি দশকের সুযোগ সৃষ্টি, ক্ষমতায়ন এবং জীবন–পরিবর্তনের গল্প উদযাপন করছি—যা শাহীদ খালেক ও মেজর সালেক বীর উত্তম ট্রাস্টের সহায়তায় সম্ভব হয়েছে।’
ট্রাস্টি তৌহিদ সামাদ বলেন, ‘এখানে এসে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেছে। সাইমা হল আমাকে নতুন করে আশাবাদী করে তোলে। আইইউবির মান ও মর্যাদা সাইমা হলের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়।’
ট্রাস্টি রাশেদ চৌধুরী বলেন, ‘সাইমা হলের এতসব মেয়েদের উন্নতি দেখে আমাদের মনে হয়—আমাদের জীবন সার্থক হয়েছে। বড় হয়ে শুনতাম—দেওয়ার আনন্দ গ্রহণের চেয়েও বেশি; এখন সত্যিই তা উপলব্ধি করি।’
উপাচার্য প্রফেসর এম. তামীম বলেন, ‘গ্লাস সিলিং’ ভাঙার জন্য সাইমা হলের মতো উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো এসব সহায়তা ছাড়া এগোতে পারত না। তোমাদের অনুরোধ করছি, এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করো এবং নিজে, পরিবার ও দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করো।’
ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্বে প্রো–ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড্যানিয়েল ডব্লিউ. লুন্ড বলেন, ‘এ ধরনের উৎসব প্রমাণ করে ১০ বছর আগে শুরু হওয়া একটি উদ্যোগ কতটা সফল হতে পারে। সাইমা হলে গিয়ে আমি বহু হাসিমুখ দেখেছি। আশা করি তোমাদের বন্ধন আজীবন অটুট থাকবে।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাইমা হলের দুই বর্তমান শিক্ষার্থী সায়েদা শবনম আফরোজ ও তাসনিয়া তাবাসসুম প্রথোমা। সংগীত পরিবেশন করেন উম্মায় হাবিবা ইসলাম, মৌমিতা শী দিয়া, জারিন আফরিন নাবিলা, সাদিয়া তাসলিমা, মৌমিতা চক্রবর্তী ও কৃপা চাকমা—আইইউবি মিউজিক ক্লাবের সহযোগিতায়। নৃত্য পরিবেশন করেন ফারিয়া ইসলাম দোণা, ইম্পা খাতুন ও কৃপা চাকমা।
সাইমা হলের সকল শিক্ষার্থীর হাতে বেগম রোকেয়ার বিখ্যাত গল্প সুলতানার স্বপ্নের কপি তুলে দেন আইইউবি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান দিদার এ. হুসাইন। অনুষ্ঠানে সাইমা হলের হোস্টেল সুপার থাসিনা জামানসহ অন্য কর্মীদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।