শ্রীলঙ্কায় বন্যায় ১৫৯ জনের মৃত্যু, জরুরি অবস্থা জারি

শ্রীলঙ্কায় বন্যা
শ্রীলঙ্কায় বন্যা © সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধ্বসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ২০০ মানুষ। দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে।

শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া দ্বীপরাষ্ট্রটির পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হানে, এরপরই সেখানে বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এক লাখ আট হাজার মানুষকে সরকারি আশ্রয় শিবিরে নেয়া হয়েছে বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটির এক তৃতীয়াংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ নেই। ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া'র পর সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। কেলানি নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় কিছু এলাকায় আরও লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।

এবারের বন্যা ও এর জের ধরে হওয়া ভূমিধ্বসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ক্যান্ডি ও বাডুল্লা এলাকায়। এখনো এ দুটি এলাকার বহু জায়গা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে।

মাসপান্না এলাকার বাডুল্লা গ্রামের সামান কুমারা বলেছেন, 'আমাদের গ্রামে আমরা দুজনকে হারিয়েছি...অন্যরা একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। এটি একমাত্র ঘর যেটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে।'

'আমরা গ্রাম ছাড়তে পারছি না, আবার কেউ এখানে আসতেও পারছে না কারণ ভূমিধ্বসে সব সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও কোনো খাবার নেই, শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশুদ্ধ পানিও,' তিনি ফোনে নিউজ সেন্টার ওয়েবসাইটকে বলেছেন।

পুলিশ বলছে, নিহতদের মধ্যে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা ১১জন বাসিন্দাও রয়েছেন। শনিবার দুপুরে কুরুনেগালা অঞ্চলের একটি জেলায় ওই বৃদ্ধাশ্রম বন্যার পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। অনুরাধাপুরে বন্যার পানিতে প্রায় ডুবন্ত অবস্থায় একটি বাস থেকে ৬৯ জনকে উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে ওই বাসের একজন যাত্রী বলেছেন, নৌবাহিনী তাদের পার্শ্ববর্তী একটি ভবনের ছাদে উঠতে সহায়তা করেছে। 'আমরা খুবই ভাগ্যবান...যখন আমরা ভবনের ছাদের ওপর ছিলাম তখন এর এক পাশ ধ্বসে গিয়েছিলো.....তিনজন নারী পানিতে পড়ে যান। তবে পরে তাদের আবার ছাদে উঠতে সহায়তা করা হয়েছে,' বলেছিলেন ডব্লিউএম শান্থা।

সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে থাকা শ্রীলঙ্কানদেরও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া দ্বীপরাষ্ট্রটির পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে আঘাত হেনেছিলো। দেশটিতে এখন মৌসুমি বৃষ্টিপাতের মৌসুম চলছে। তবে এই মৌসুমে এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতি সেখানে অনেকটাই বিরল।

এর আগে ২০০৩ সালে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছিলো দেশটি। তখন ২৫৪ জন মারা গিয়েছিলেন আর বাস্তুহারা হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। এবার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা যাচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে লাখ লাখ মানুষ এ দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় ৩০০জন ও থাইল্যান্ডে ১৬০জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া মাল এদিকে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন বিভাগ বিদেশী নাগরিকদের ভিসা নিয়ে জরুরি বার্তা দিয়েছে।

শনিবার ঢাকায় অবস্থিত শ্রীলংকার হাইকমিশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশিদের জন্য বিশেষ ভিসা সুবিধা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, যেসব বিদেশি নাগরিকদের ২৮শে নভেম্বর বা তার পরে শ্রীলঙ্কা ত্যাগ করার কথা ছিল, কিন্তু ফ্লাইট বাতিল বা আবহাওয়ার কারণে ভ্রমণ অসুবিধার কারণে তারা তা করতে পারেননি, তাদের ভিসা এক্সটেনশন ফি এবং ওভারস্টে জরিমানা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেইসব ভ্রমণকারীদের সহায়তা করার জন্য, যারা অনিবার্য কারণে বিলম্বের শিকার হয়েছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার ভোর থেকে দেশজুড়ে জরুরি পরিষেবা ছাড়া বেশিরভাগ ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকায় ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে জনজীবন।য়েশিয়াতেও কিছু মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।