নির্বাচন করতে চাইলে উপদেষ্টাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত: সাইফুল হক

এফডিসিতে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে
এফডিসিতে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে © সংগৃহীত

উপদেষ্টারা নির্বাচন করতে চাইলে সরকার থেকে এখনই পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। শনিবার (২৯ নভেম্বর) এফডিসিতে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন তিনি। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। প্রতিযোগিতায় ঢাকা কলেজকে পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

সাইফুল হক বলেন, উপদেষ্টারা নির্বাচন করতে চাইলে সরকার থেকে এখনই পদত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় সরকারের নিরপেক্ষতাসহ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এনসিপি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটে যাওয়া নিয়ে দোলাচলে আছে। ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও আলাপ আলোচনা চলতে পারে। তবে পেন্ডুলামের মতো ডিগবাজি না খেয়ে নীতি-আদর্শ মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

রাজনীতিতে অতীতে চর দখলের যে চর্চা হয়েছে আমরা ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাবার সঙ্গে সঙ্গে বিত্তবৈভব অর্জনের যে প্রতিযোগিতা আগে দেখা গেছে তার পুনরাবৃত্তি হলে জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। এবারের নির্বাচনে শুধু মার্কা দেখে কেউ ভোট দিবে না। প্রার্থীর গুনাগুণ ও দলীয় আদর্শ বিচার করে ভোট দিবে। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিলো মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের পথ রুদ্ধ করা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণের সুযেগ না থাকলেও তাদের দলীয় সমর্থকরা বিশেষ কোন দলকে এককভাবে ভোট দিবে সেটি মনে হয় না।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা নেই। সকল বেড়াজাল ছিন্ন করে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি-জামায়াতের যে তর্ক-বিতর্ক চলছে তাতে আসন্ন নির্বাচন বাধাগ্রস্থ হবে না। তাদের এই মত-দ্বিমতই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। প্রার্থী ও ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দু-চার জায়গায় জঙ্গি মিছিল কিংবা বাস-ট্রাকে আগুন দিয়ে কোন অপশক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না। লেভেল প্লেইং ফিল্ড বজায় থাকলে এবারের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক ভোটার নিঃসংকোচে ভোট দিবে।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দুবৃর্ত্তায়ন বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে যাতে দুর্নীতির পালাবদল না হয়। আগের মতো কেউ নিজকে রাষ্ট্র মনে করলে তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে। এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে পুলিশের বডি ক্যামেরা ব্যবহারের কথা রয়েছে। যদি নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা দায়িত্বশীল আচরণ না করে, তাহলে অতীতের মতো ধানক্ষেতে-পাটক্ষেতে ভোটের বাক্স পাওয়া যেতে পারে। যা আমরা প্রত্যাশা করি না।

কিরণ আরও বলেন, আমাদের মতো দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা উইনার ওয়ান্টস টু টেক অল। বিজয়ী দল সবকিছু নিয়ে নিতে চায়। আর যারা জিততে পারে না, সরকার গঠন করতে পারে না তারা হামলা-মামলার শিকার হয়, পালিয়ে বেড়ায়। ফলে কেউ হারতে চায় না। তবে আমরা আশা করি যারা এবার সরকার গঠন করবে তারা বিরোধী দল ও মতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা আগামী নির্বাচনের বড় চ্যালেঞ্জ শীর্ষক ছায়া সংসদে বিচারক ছিলেন- অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন, সাংবাদিক সাইদুর রহমান ও সাংবাদিক মসিউর রহমান খান।

প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।